OrdinaryITPostAd

ফিতরা কত টাকা ২০২২ | সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ | ফিতরা দেওয়ার নিয়ম

ফিতরা বা ফেতরা আরবি শব্দ, ইসলামে যাকাতুল ফিতরা(ফিতরের যাকাত)বা সাদাকাতুল ফিতর(ফিতরের সদকা)নামে অধিক পরিচিত। ফিতর বা ফেতর বলতে সকালের খাদ্যদ্রব্য বোঝানো হয় যা দ্বারা রোযাদারগণ রোজা ভঙ্গ করেন। সাদাকাতুল ফিতর পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব ও দুস্থ রোজাদারদের মাঝে বিতরণ করা বা দান করাকে বুঝায়। সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করা হতে বিরত এবং দিনের বেলায় হালাল স্ত্রী সহবাস বিরত থেকে রোজা বা উপবাস পালনের পর সন্ধ্যায় ইফতার বা সকালের খাদ্য গ্রহণ করা হয়।

প্রত্যেক মুসলিম নর নারী দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পরে আল্লাহতায়ালা রোজাদারের সম্মানার্থে যাকাতুল ফিতরা সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেছেন। যাকাতুল ফিতরা সাদাকাতুল ফিতর অর্থ দাঁড়ায় বিনিময় করা, ভুল ক্রটি মার্জনার মাফ করার ব্যবস্থা, রোজার যাকাত বলা হয়।

পোস্টের সূচিপত্রঃ-

প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব

নারী পুরুষ, স্বাধীন পরাধীন, শিশু বৃদ্ধ, ছোট-বড় প্রত্যেক মুসলিমের জন্য সাদাকাতুল ফিতরপ্রদান করা ওয়াজিব।

  • ইবনে ওমরঃ থেকে জানা যায়ঃ-“রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক-স্বাধীন-ক্রীতদাস,নারী-পুরুষ,ছোট-বড় মুসলমানের যাকাতুল ফিতর এক ‘সা’ পরিমাণ খেজুর, যব, কিসমিস,গম,পনির ওয়াজিব করেছেন।তোমাদের প্রতি এই নির্দেশ হলো ঈদের নামাজ বের হওয়ার পূর্বেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে নিবো।”
  • হযরত আমর বিন শোয়ায়েব রা. হতে বর্ণিত সাদাকায়ে ফিতরওয়াজিবপ্রত্যেক মুসলমান নর নারী, আযাদ ও গোলামএবংছোট ও বড় সকলের উপর এক সা’ খাদ্য।
  • হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাবা অথবা সালাবাইবনে আব্দুল্লাহইবনে আবুশুয়াইব তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামবলেছেন, এক সা’ গমপ্রত্যেক দুই ব্যক্তির পক্ষ থেকে ছোট হোক বা আযাদ হোকবা গোলাম হোকএবং নারী বা পুরুষ হোক,তোমাদের মধ্যে যে ধনী তাকেআল্লাহ এর দ্বারা পবিত্র করবেন, কিন্তু যে দারিদ্র তাকে আল্লাহ ফেরত দিবে জাসে দিয়েছিল তার হতে অধিক।
  • ইকরামা রহ.ইবনে আব্বাস রা.থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ করেছেন রোজা কে অনর্থককথাবার্তাও অশ্লীল অবস্থা হতে পবিত্র করার এবং গরিবের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য।
  • হযরত আবু সাঈদ রা.বলেন, আমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জামা নাই সাদাকায়ে ফিতর এক সা’ যব, এক সা’ খেজুর,এক সা’ পনির,অথবা এক সা’ কিসমিস বা আঙ্গুর দিতাম।
  • হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি রমজান মাসে শেষের দিকে বললেন, তোমরা তোমাদের রোজা যাকাত আদায় করো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক স্বাধীন ব্যক্তি ও ক্রীতদাস, পুরুষ ও নারী এবং ছোট ও বড় সকলে উপরে এই যাকাত নির্ধারণ করেছেন।

ফিতরা কে দেবে

সাদাকাতুল ফিতর মুসলমান নর-নারী, ছোট-বড় সকলের জন্য আদায় করা ওয়াজিব। এই মর্মে হাদীসে এসেছে ইবনে ওমর বলেন রাসূল(স) স্বয়ং উম্মতের ক্রীতদাস ও স্বাধীন নারী ও পুরুষ ছোট ও বড় সকলের উপর মাথাপিছু এক“স” পরিমাণ খেজুরবাগ যাকাতুল ফিতর আদায় হিসেবে ওয়াজ করেছেন এবং উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বে আদায় করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। যদি কোন ব্যক্তি ঈদের দিন সুবহে সাদেকের আগে পূর্বে কেউ মারা যায়, তার জন্য বিধান হলো ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়।কোন শিশু সন্তান সুবহেসাদেকের পরে জন্মগ্রহণ করে তার পক্ষেও পিতা মাতা কিংবা রক্তের আত্মীয় ভেতরে কেউ সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে চাই সেটার জন্য বিধান হলো যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব।সাদাকাতুল বা যাকাতুল ফিতরহল জানের সদকা,মালের নয় বিধায় জীবিত অবস্থায় প্রত্যেক মুসলমানের জানের সদকা আদায় করা ওয়াজিব। কোন ব্যক্তি সিয়াম পালনের অক্ষমতা থাকলে তার জন্য ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব।

ফিতরা কে পাবে

অভাবগ্রস্থ, অসহায়, গরীব দুস্থ ব্যক্তিকে ফিতরা প্রদান করা যাবে।

আরও পড়ুনঃ তেলের দাম কি সত্যিই অন্য দেশের তুলনায় বেড়েছে

বাড়িতে কাজের লোকের ফেতরা দেয়া

আমাদের দেশে অনেক বড় বড় শহর কিংবা রাজধানী মানিক বাসায় কাজের ব্লগ লেখে বাড়িতে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করেন এমন অনেকে রয়েছে আমাদের মাঝে। কাজের লোক আমরা যারা সবাই বুঝি বান্দা কাজের বুয়া (মাসিক বেতনভুর্ক্ত) বা ছুটা কাজের বুয়া (খন্ডকালীন সময় দেয়)। মালিকের ওপরে আবশ্যক নয় বেতনভুক্ত কাজের ব্যক্তির পক্ষে ফিতরা প্রদান করা। তবে মালিক ইচ্ছে করলে কাজের লোককে ফিতরা প্রদান করতে পারবে। তবে তিনি বেতনভুক্ত কর্মচারীকে ফিতরা প্রদান করতে পারবেন না।

যা দিয়ে ফিতরা দেওয়া যাবে

সাদাকাতুল ফিতর গম, আটা, কিসমিস, পনির, যব দ্বারা আদায় করা যাবে, জনপ্রতি অর্ধসা’ বা পৌনে দুই কেজি।

খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা দেওয়া

ইসলামের মূল উৎস থেকে শরীয়তের বিধান গ্রহণ করতে হবে আমাদের সকলের। মূল উৎস দুটি, এক পবিত্র কুরআন (সূরা আল আরাফ ৭/৩, ও সহি হাদিস। কোরআন মাজিদের পরে সহি হাদিস গুলো হবে শরীয়াতের শক্ত দলিল। মিস’আর ইবনেকিদাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি সাদইবনে ইব্রাহিমকে বলতে শুনেছি নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো নিকট থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর হাদিস গ্রহণ করা যাবে না। আবু ক্বাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলতে শুনেছি।

ইসলামী ফাউন্ডোশন সভায় নির্ধারিত ফিতরা মূল্য

৯ এপ্রিল (শনিবার) ২০২২ ইসলামিক ফাউন্ডোশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত এ বছরের ফিতরার পরিমাণ নির্ধারণ করা দিয়েছে। সভায় সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৩১০ টাকা নিধার্রণ করে মিটিং মন্তব্য ঘোষণা করে।

  • গমের বাজার মূল্য অনুযায়ীঃ ৭৫ টাকা
  • যবের বাজার মূল্য অনুযায়ীঃ ৩০০ টাকা
  • কিসমিসের বাজার মূল্য অনুযায়ীঃ ১৪২০ টাকা
  • খেঁজুরের বাজার মূল্য অনুযায়ীঃ ১৬৫০ টাকা
  • পনিরের বাজার মূল্য অনুযায়ীঃ ২৩১০ টাকা

প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত সামর্থ্য অনুসারে ইদগাহ রওনা হওয়ার পূর্বে সামর্থ্যবান ব্যক্তি সর্বোচ্চ ২৩১০ টাকা অথবা অর্থনেতিকভাবে সামর্থ্য কম সেইসব ব্যক্তিরা জনপ্রতি সর্বনিম্নদর ধরে ৭৫ টাকা ফিতরা আদায় করে নিতে হবে।

হাদিসে সাদাকাতুল ফিতর নাম

সাদাকাতুল ফিতর এর বিভিন্ন হাদিসে অনেক নামে পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাম পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলোঃ-

  • সাদাকাতুল ফিতর
  • যাকাতুল ফিতর
  • যাকাতুরমজান
  • যাকাতুসসাওম
  • সাদাকাতুল সাওম
  • সদাকাতুল রমজান
  • সাদাকাতু রুউস
  • যাকাতুল আবদান।

ফিতরা আদায়ের উপকারিতা

সদাকাতুল ফিতর দ্বারা আল্লাহ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হয়। তিনি নিজ অনুগ্রহে বান্দাকে পূর্ণ একমাস সিয়াম পালনের তৌফিক দিয়েছেন, সাথে সাথে সদাকাতুল ফিতরের আরেকটি ভালো কাজের তৌফিক দান করলেন।

  • দরিদ্র ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা
  • ঈদের দিন গুলোতে দরিদ্র ব্যক্তির ন্যায় স্বচ্ছলতা বোধ করে
  • সাদাকাতুল ফিতরেরফলে ধনী-গরীব সবার জন্য ঈদ আনন্দদায়ক হয়
  • সাদাকাতুল ফিতরের মাধ্যমে সিয়াম অবস্থায় ঘটে যাওয়া ত্রুটিগুলো কাফফারা হয়ে যায়
  • সাদাকাতুল ফিতর আদাই কারি দানশীল হিসেবেপরিগণিত হয়।

সূত্রাবলী

  • আশরাফুল হিদায়া,২/১৫৪
  • সূরা আলা,আয়াত নং ১৪-১৫
  • সূরা মুজাদালা,আয়াত নং ১৩
  • সহি বুখারী,হাদিস নং ১৫০৩
  • সুনানে তিরমিজি,হাদিস নং ৬৭৪
  • সুনানে আবু দাউদ,হাদীস নং ১৬১৯
  • সুনানে আবু দাউদ,হাদীস নং ১৬১১
  • মিশকাতুল মাসাবীহ,হাদিস নং ১৮১৬
  • মিশকাতুল মাসাবীহ,হাদীস নং ১৭২৫
  • আশরাফুল হিদায়া, খ- নং-২,পৃষ্ঠা নাম্বার- ১৫৪

পরিশেষ

পবিত্র মাহে রামাদান দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনা শেষে আমাদের প্রত্যেকের কিছু ভুল ত্রুটি হয়ে যায়, মহান আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দার জন্য সেইসব ভুল ত্রুটি জেনে হোক বা অজানা হোক তা শুদ্ধ করা সাদাকাতুল ফেতরা অর্থাৎ বান্দার রোজার যাকাত দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তিনি রমজান মাসে শেষের দিকে বললেন, তোমরা তোমাদের রোজা যাকাত আদায় করো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক স্বাধীন ব্যক্তি ও ক্রীতদাস, পুরুষ ও নারী এবং ছোট ও বড় সকলে উপরে এই যাকাত নির্ধারণ করেছেন। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে রোজার যাকাত প্রদানের তৌফিক দান করুন আমিন। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url