OrdinaryITPostAd

হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠতম রাত | ক্বদরের রাত তালাশ | শেষ দশকে আমল

মহিমান্বিত লাইলাতুল ক্বদরেরলাইলাতুল কদর ও শেষ দশককে আমাদের কীভাবে ও কতটুকু গুরুত্ব দেওয়া দরকার?

▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

রামাদানের শেষ দশ রাতের কোনো এক রাতে লাইলাতুল কদর বা শবে কদর হয়।

পোস্টের সূচিপত্রঃ

নবীজি যা করতেন

আয়িশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রমাদানের) শেষ দশকে যে পরিমাণ আমল করতেন, অন্য কোনো সময়ে সে পরিমাণ আমল করতেন না।’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৭৮]

পরিবারকেও জাগিয়ে দেওয়া এবং নিজেও উত্তমভাবে ইবাদতে মগ্ন হওয়া

আয়িশা (রা.) আরো বলেন, ‘যখন রামাদানের শেষ দশক আসতো, তখন রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিধেয় বস্ত্রকে শক্ত করে বাঁধতেন, রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ২০২৪] সুতরাং, শুধু নিজে ইবাদত করবেন না, পরিবারের সদস্যদেরও ইবাদতে শামিল করবেন। তাদেরকে জাগিয়ে দেবেন। তারা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়বেন এবং অন্যান্য ইবাদত করবেন।

ইতিকাফ: কদরের রাতটি পেতেই হবে

শেষ দশ দিনের ইতিকাফের অন্যতম একটি কারণ হলো, লাইলাতুল কদর তালাশ করা। কারণ, যে ব্যক্তি রামাদানের শেষ দশটি দিন ও দশটি রাত উত্তমভাবে মসজিদের নির্জন পরিবেশে আল্লাহর সান্নিধ্যে কাটাবে, সে ইনশাআল্লাহ্ সহজেই মহিমান্বিত রাত লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য লাভ করতে পারবে।

এই প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে—

  • রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি (রমাদানের) প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করে এ মহান রাতটি খুঁজলাম, এরপর দ্বিতীয় ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। অতঃপর আমাকে বলা হলো, এ রাতটি শেষ ১০ দিনের (রাতের) মাঝে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন শেষ দশকে ইতিকাফ করে।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৬১]
  • আয়িশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ইন্তিকাল পর্যন্ত প্রতি বছর রামাদানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর (ইন্তিকালের) পর তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করতেন।’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৭৪]

যাদের পক্ষে সম্ভব হবে, তারা অবশ্যই ইতিকাফ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। কারণ ইতিকাফ করলে লাইলাতুল কদর নসিব হওয়ার প্রায় শতভাগ সম্ভাবনা থাকে। আর, জীবনে যদি কদরের একটি রাতও সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে এটি নিজের আমলনামার জন্য মহাসৌভাগ্যের সোপান হবে, ইনশাআল্লাহ্।

ভাগ্যরজনী: লাইলাতুল কদর

প্রতি কদরের রাতে আগামী এক বছরের যাবতীয় সিদ্ধান্ত হয়। তাই, এটিকে ‘ভাগ্যরজনী’ বলা হয়। যদিও সমাজে ভুল প্রচলন রয়েছে যে, শবে বরাত ভাগ্যরজনী।

আল্লাহ্ বলেন, ‘‘লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সে রাত ফজরের সূচনা পর্যন্ত।’’ [সুরা ক্বাদর, আয়াত: ৩-৫]

কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ্ বলেছেন, ‘‘এতে (এই রাতে) প্রত্যেক বিষয় স্থিরকৃত (সিদ্ধান্ত) হয়।’’ [সুরা দুখান, আয়াত: ০৪]

কদর থেকে বঞ্চিত হওয়া

আনাস (রা.) বলেন, রামাদান শুরু হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘রামাদান মাস তোমাদের মাঝে উপস্থিত। এ মাসে রয়েছে এমন এক রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি এ (রাত) থেকে বঞ্চিত হলো; সে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। শুধু বঞ্চিতরাই এ রাতের কল্যাণ লাভ হতে বঞ্চিত থাকে।’’ [ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১৬৪৪; হাদিসটি হাসান সহিহ]

মিনহাজুল কাসিদিন কিতাবে এসেছে, ‘মর্যাদাপূর্ণ দিন ও রাতগুলো থেকে উদাসীন থাকা উচিত নয়, কেননা ব্যবসায়ী যদি লাভের মৌসুমেই উদাসীন থাকে, তাহলে সে কখন লাভবান হবে?’ [ইমাম ইবনুল জাওযি, মিনহাজুল কাসিদিন: ১/৩৪৩]

লাইলাতুল কদরে করণীয় আমল ও অন্যান্য বিষয়ে আরো বেশ কিছু পর্ব আসবে, ইনশাআল্লাহ।

▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

পিরিয়ডে (হায়েজ অবস্থায়) থাকা নারীরা লাইলাতুল কদরে যেসব আমল করতে পারেন

এই মহাসম্মানিত রাতে নারীরা লাইলাতুল কদরে অনেক আমল করতে পারেন। শুধুমাত্র সহি নিয়ত থাকলে হবে।

দু‘আ করা

পিরিয়ডকালে দু‘আ করতে কোনো অসুবিধা নেই। সুতরাং, উত্তম হবে—অজু করে লাইলাতুল কদরের মহান রজনীতে আন্তরিকভাবে দু‘আয় মনোনিবেশ করা। এই রাতে দু‘আ কবুল হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘‘দু‘আই ইবাদত।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৭৯; হাদিসটি সহিহ]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো।’’ [সুরা মুমিন, আয়াত: ৬০]

কোনো বিশেষ নিয়ম নয়, স্বাভাবিকভাবে দু‘আর বিভিন্ন আদব ও নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে দু‘আ করবেন।

তাওবাহ-ইস্তিগফার পড়া

এই রাতের গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল হলো, আল্লাহর নিকট তাওবাহ্ ও ইস্তিগফার পড়া। ইস্তিগফারের যত বাক্য মুখস্থ আছে, সবই পড়বেন। ইস্তিগফারের জন্য নিচের বাক্যটি খুব সহজ।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে আর কাউকে এটি অধিক পরিমাণে পড়তে দেখিনি—

أَسْتَغْفِرُاللّٰهَ وَأَتوبُ إِلَيْهِ

[আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতূবু ইলাইহি]

অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি এবং তাঁর নিকট তাওবাহ্ করছি। [ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৯২৮, হাদিসটি সহিহ]

পাশাপাশি আরেকটি সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্তিগফার বেশি বেশি পড়তে পারেন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর আগে এই ইস্তিগফারটি খুব বেশি পড়তেন—

سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

[সুব‘হানাল্লাহি ওয়া বি‘হামদিহি, আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতূবু ইলাইহি]

অর্থ: আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকট তাওবাহ করছি। [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৯৭৫]

যাদের পক্ষে সম্ভব, তারা সায়্যিদুল ইস্তিগফার পড়বেন বেশি বেশি। এটি সর্বশ্রেষ্ঠ ইস্তিগফার। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৩০৬]

এর পাশাপাশি তাওবাহর শর্তগুলো পূরণ করে অবশ্যই নিজের সমস্ত গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করবেন। তাওবাহর তিনটি শর্ত হলো: কৃত গুনাহ স্বীকার করে সেসব আগে ছেড়ে দিতে হবে, নিজ অপরাধের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে এবং ভবিষ্যতে এসব গুনাহ আর না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করতে হবে। [ইমাম নববি, রিয়াদুস সলিহিন]

রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরুদ পাঠ করা

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার প্রতি ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন, ১০ টি গুনাহ মোচন করবেন এবং তার জন্য ১০ টি স্তর উন্নীত করবেন।’’ [ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ১২৯৭; ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৯০৪; হাদিসটি সহিহ]

নামাজের শেষ বৈঠকে যে দরুদটি আমরা পড়ি, সেটি সর্বোত্তম দরুদ। এটি পড়াই উত্তম। তবে, এটি ছাড়া অন্য দরুদও পড়া যাবে।

নিচের দরুদটিও পড়া যায়।

اللهم صل على محمدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ، وَصَلِّ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ، وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ

[আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ‘আবদিকা ওয়া রাসূলিকা, ওয়া সল্লি ‘আলাল মুমিনী-না ওয়াল মুমিনা-ত, ওয়াল মুসলিমী-না ওয়াল মুসলিমা-ত]

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দা ও রাসুল মুহাম্মাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন। আরো রহমত প্রেরণ করুন সকল মুমিন নারী-পুরুষ ও সকল মুসলিম নারী-পুরুষের উপর।

হাদিসে এসেছে, যে-মুসলমানের দান-সাদাকাহ করার মতো কিছু নেই, সে যেন দু‘আ করার সময় এটি বলে। এটি তার জন্য জাকাতস্বরূপ। [ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৯০৩; ইমাম আবু ইয়ালা, আল-মুসনাদ: ১৩৯৭; ইমাম হাকিম ও যাহাবি (রাহ.) হাদিসটি সহিহ বলেছেন আর হাইসামি (রাহ.) হাসান বলেছেন]

সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ও আল্লাহু আকবার

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হানি (রা.)-কে বলেন—

  • তুমি ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে, এটি তোমার পক্ষে ইসমাইল (আ.)-এর বংশের ১০০ ক্রীতদাস মুক্ত করার সমতুল্য হবে;
  • তুমি ১০০ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ বলবে, এটি তোমার পক্ষে আল্লাহর রাস্তায় যু[দ্ধে]র জন্য ১০০ টি সাজানো ঘোড়ায় মু[জা]হিদ প্রেরণের সমতুল্য হবে;
  • তুমি ১০০ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে, এটি তোমার পক্ষ থেকে ১০০টি মাকবুল (কবুলকৃত) উট কুরবানির সমতুল্য হবে;
  • তুমি ১০০ বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, এত সওয়াব পাবে, যার ফলে আসমান ও যমিন পূর্ণ হয়ে যাবে। [শায়খ আলবানি, সহিহুত তারগিব: ১৫৫৩; হাদিসটি হাসান]

সহজ দুটো যিকর পাঠ করা

হাদিসে নিচের বাক্যটিকে বলা হয়েছে জান্নাতের রত্নভাণ্ডার। এটি বেশি বেশি পড়তে পারেন—

ﻻَ ﺣَﻮْﻝَ ﻭَﻻَ ﻗُﻮَّﺓَ ﺇِﻻَّ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ

লা হাউলা ওয়ালা ক্বুও-ওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ

অর্থ: আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কারো (গুনাহ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় নেই এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি নেই। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৩৮৪]

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘সর্বশ্রেষ্ঠ যিকর হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৩৮৩; হাদিসটি হাসান]

জীবিত ও মৃত সকল মুমিনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তার আমলনামায় প্রত্যেক মুসলিমের জন্য একটি করে সওয়াব লিখে দেন।” [শায়খ আলবানি, সহিহুল জামি’: ৬০২৬; হাদিসটি হাসান]

এই দু‘আটি পড়তে পারেন—

ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻭَﻟِﻮَﺍﻟِﺪَﻱَّ ﻭَﻟِﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳَﻮْﻡَ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﺍﻟْﺤِﺴَﺎﺏُ

অর্থ: হে আমাদের রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সকল ঈমানদারকে তুমি সেদিন ক্ষমা করে দিও, যেইদিন হিসাব কায়েম করা হবে। [সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, কোনো অনুপস্থিত মুসলিমের জন্য দু‘আ করলে, ফেরেশতারা বলেন, ‘তোমার জন্যও অনুরূপ হোক!’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৬৮২০]

কদরের রাতে পড়ার বিশেষ দু‘আটি বেশি বেশি পড়া

আয়িশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি বুঝতে পারি, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে ওই রাতে কী বলব?’ নবিজি বলেন, তুমি বলো—

اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ

[আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউ-উন, তু‘হিব্বুল ‘আফওয়া ফা‘অ্ফু ‘আন্নী]

অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে পছন্দ করো। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দাও। [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩৮৫০; হাদিসটি সহিহ]

কিছু সাদাকাহ করা

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক ব্যক্তি (হাশরের মাঠে) তার সদাকার ছায়াতলে থাকবে, যতক্ষণে লোকদের মাঝে ফয়সালা শেষ না হবে।” [শায়খ আলবানি, সহিহুল জামি’: ৪৫১০; হাদিসটি সহিহ]

যদি সম্ভব হয়, তবে রাতেই সাদাকাহ করুন। এটাই উত্তম। এক টাকা দান করলে হাজার মাস (৮৩ বছর) ধরে এক টাকা দান করার নেকি পাবেন। এই রাতের প্রতিটি আমল এভাবেই বৃদ্ধি পাবে। কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘কদরের রাতটি (মর্যাদার দিক থেকে) হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।’’ [সুরা ক্বাদর, আয়াত: ০৩]

যদি রাতে দিতে না পারেন, তবে রাতেই কিছু টাকা সাদাকাহ করার জন্য আলাদা করে রেখে দিন। এগুলো দিনের বেলা গরিবদেরকে দিয়ে দিন।

এছাড়াও ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদি সুবহানাল্লাহিল আযীম, দু‘আ ইউনুস, ‘সুবহানাল্লাহিল আযীমি ওয়া বিহামদিহ’ ইত্যাদি সব রকমের যিকর বেশি বেশি পড়তে থাকবেন।

লাইলাতুল কদরের জন্য ১৩ টি সহজ আমল, যেগুলো তুলনামূলক অনেক সহজ

(আজ রাত থেকেই কদর তালাশ করা হবে)

▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬

প্রথমেই জেনে খুশি হোন: আল্লাহ সূরা কদরে বলেছেন, কদরের রাতটি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। তাই এই রাতে একটি নেক আমল করা মানে হাজার মাস যাবত এই নেক আমলটি করা। সুবহানাল্লাহ্! রামাদানের শেষ দশ দিনে কদর তালাশ করতে বলেছেন নবিজি। তাই, আমরা শেষ দশ দিন নিচের এই আমলগুলো করতে পারি।

তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা 

(বিশেষত শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আর রাতের প্রথম প্রহরে নিচের বাকি আমলগুলো করা যায়)

লাইলাতুল কদরের প্রধান আমল হলো, কিয়াম তথা নামাজে দণ্ডায়মান হওয়া। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াবের আশায় কদরের রাতে (ইবাদতের জন্য) দণ্ডায়মান হবে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ২০১৪]

সম্ভব হলে ৮/১০ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা যায়। এরপর আন্তরিকতার সাথে সময় নিয়ে দু‘আ করুন।

সুরা ইখলাস পাঠ করা

রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যাঁর হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি, নিশ্চয়ই এই সুরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৫০১৩]

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস ১০ বার শেষ করবে, তার জন্য জান্নাতে আল্লাহ্ একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন।’’ [শায়খ আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ৫৮৯; হাদিসটি সহিহ]

তাই, আমরা শেষ দশকের প্রতিটি রাতে ২০/৩০ বার বা আরও বেশি সুরা ইখলাস পড়তে পারি।

এছাড়া সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত, সুরা মুলক ও বাকি তিন কুল পড়তে পারি। 

সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ও আল্লাহু আকবার

—প্রতিটি ১০০ বার করে মোট ৪০০ বার পড়া।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হানি (রা.)-কে বলেন—

  • তুমি ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে, এটি তোমার পক্ষে ইসমাইল (আ.)-এর বংশের ১০০ ক্রীতদাস মুক্ত করার সমতুল্য হবে;
  • তুমি ১০০ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ বলবে, এটি তোমার পক্ষে আল্লাহর রাস্তায় যু[দ্ধে]র জন্য ১০০ টি সাজানো ঘোড়ায় মু[জা]হিদ প্রেরণের সমতুল্য হবে;
  • তুমি ১০০ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে, এটি তোমার পক্ষ থেকে ১০০টি মাকবুল (কবুলকৃত) উট কুরবানির সমতুল্য হবে;
  • তুমি ১০০ বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, এত সওয়াব পাবে, যার ফলে আসমান ও যমিন পূর্ণ হয়ে যাবে। [শায়খ আলবানি, সহিহুত তারগিব: ১৫৫৩; হাদিসটি হাসান]

একটি গুরুত্বপূর্ণ তাসবিহ কমপক্ষে ১০০ বার পড়ার চেষ্টা করা

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার পড়বে—

لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ

[মোটামুটি উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর]

এটি বিশুদ্ধ উচ্চারণে শিখতে শুনুন: 

অর্থ: আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই। তিনি এক; তাঁর কোনো অংশীদার নেই। রাজত্ব এবং প্রশংসা কেবল তাঁরই; তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

  • সে ১০টি গোলাম মুক্ত করার সওয়াব পাবে;
  • তার জন্য ১০০ সওয়াব লেখা হবে;
  • তার ১০০ গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে;
  • ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান থেকে নিরাপদ থাকবে এবং (সন্ধ্যায় বা রাতে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে)
  • ওই দিনের হিসেবে কেউ তার চেয়ে উত্তম সওয়াবের কাজ করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, ওই ব্যক্তি সক্ষম হবে, যে এর চেয়ে বেশি পড়বে।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৩২৯৩; ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ৫০৭৭]
  • অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি প্রত্যেকটি দশবার করে বলবে, সে ইসমাঈল (আ.)-এর বংশের চারজন ক্রীতদাস মুক্ত করে দেওয়ার নেকি পাবে।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৪০৪]

কদরের রাতের বিশেষ দু‘আটি মনোযোগের সাথে পড়া

আয়িশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি বুঝতে পারি, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে ওই রাতে কী বলবো?’ নবিজি বলেন, তুমি বলো—

اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ

[আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউ-উন, তু‘হিব্বুল ‘আফওয়া ফা’ফু ‘আন্নী]

অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে পছন্দ করো। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দাও। [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩৮৫০; হাদিসটি সহিহ]

এই দু‘আটি রামাদানের শেষ দশকের প্রতিটি রাতে প্রচুর পরিমাণে পড়তে চেষ্টা করবো।

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্তিগফার ও তাওবার যিকরটি বেশ কয়েকবার পড়া।

ইবনু মাস‘উদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি এই দু‘আ পড়বে, তার গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে—যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলায়নকারী হয়।’’

ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠّٰﻪَ ﺍﻟَّﺬِﻱْ ﻻَ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻻَّ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺤَﻰُّ ﺍﻟْﻘَﻴُّﻮْﻡُ ﻭَﺃَﺗُﻮْﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ

[আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাযি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল ‘হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি]

অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই—তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী—এবং আমি তাঁর নিকট তাওবাহ্ করছি। [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৫১৭; হাদিসটি সহিহ]

বেশি বেশি সাইয়িদুল ইসতিগফার পড়া

সাইয়িদুল ইস্তিগফার অর্থ ‘ইস্তিগফারের নেতা’

ﺍَﻟﻠّٰﻬُﻢَّﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻲْ ﻟﺎَ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻟﺎَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻲْ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙَ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ ﺃَﻋُﻮْﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ ﺃَﺑُﻮْﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﺃَﺑُﻮْﺀُ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻲ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟﺎَ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟﺎَّ ﺃَﻧْﺖَ

[আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী ওয়া আনা ‘আবদুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহ্দিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতা ত’তু আ‘উযুবিকা মিন শাররি মা সনা’তু আবূ-উ লাকা বিনি’মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূ-উ বিযানবী, ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা]

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনিই আমার রব। আপনি ছাড়া কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই। আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন আর আমি আপনারই গোলাম। আপনি আমার কাছ থেকে যে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন, সাধ্যানুযায়ী আমি তার ওপর চলবো। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। আপনি আমার প্রতি আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা স্বীকার করছি এবং আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে মাফ করে দিন। কারন আপনি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় এ দু‘আটি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়বে, অতঃপর সেদিন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এটি পড়বে, অতঃপর সকাল হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৩০৬]

নিজের জন্য, বাবা-মার জন্য এবং যেকোনো জীবিত ও মৃত মুসলিমের জন্য দু‘আ করা

মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর চমৎকার দু‘আ (ইসতিগফার)। এর মাধ্যমে একই সাথে নিজের জন্য, বাবা-মার জন্য এবং সকল জীবিত ও মৃত ঈমানদারের জন্য দু‘আ করা হয়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ।

رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ

‘‘হে আমাদের রর! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিয়েন।’’ [সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১]

হাদিসে এসেছে, কোনো অনুপস্থিত মুসলিমের জন্য দু‘আ করলে, ফেরেশতারা বলেন, ‘তোমার জন্যও অনুরূপ হোক!’[ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৬৮২০]

গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপক অর্থবোধক একটি দু‘আ বেশি করে পড়া

​​​​​​​اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ

[আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাহ।]

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ৫০৭৪; হাদিসটি সহিহ]

দ্বীনের উপর টিকে থাকার দু‘আ, এটিও বেশি করে পড়া উচিত কদরের রাতে

উম্মু সালামাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দু‘আটি সবচেয়ে বেশি পড়তেন,তা হলো–

يَامُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلٰي دِيْنِكَ

[ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূব! সাব্বিত ক্বলবী ‘আলা দীনিকা]

অর্থ: হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের (ইসলামের) উপর অটল রাখুন।[ইমাম তিরমিযি,আস-সুনান: ৩৫২২; হাদিসটি সহিহ]

কিছু দান-সদাকাহ্ করা

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক ব্যক্তি (হাশরের মাঠে) তার সদাকার ছায়াতলে থাকবে, যতক্ষণে লোকদের মাঝে ফয়সালা শেষ না হবে।” [শায়খ আলবানি, সহিহুল জামি’: ৪৫১০; হাদিসটি সহিহ]

যদি সম্ভব হয়, তবে রাতেই করুন। এটাই উত্তম। এক টাকা দান করলে হাজার মাস (৮৪ বছর) ধরে এক টাকা দান করার নেকি পাবেন। এই রাতের প্রতিটি আমল এভাবেই বৃদ্ধি পাবে। কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘কদরের রাতটি (মর্যাদার দিক থেকে) হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।’’ [সুরা ক্বাদর, আয়াত: ০৩]

যদি রাতে দিতে না পারেন, তবে রাতেই কিছু টাকা সাদাকাহ করার জন্য আলাদা করে রেখে দিন। এগুলো দিনের বেলা গরিবদেরকে দিয়ে দিন।

বেশি করে দরুদ পড়বেন

রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর। শ্রেষ্ঠ দরুদ সেটিই, যা আমরা নামাজের শেষ বৈঠকে পড়ি।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার প্রতি ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন, ১০ টি গুনাহ মোচন করবেন এবং তার জন্য ১০ টি স্তর উন্নীত করবেন।’’ [ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ১২৯৭; ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৯০৪; হাদিসটি সহিহ]

সহজ দুটো যিকর পাঠ করা

হাদিসে নিচের বাক্যটিকে বলা হয়েছে জান্নাতের রত্নভাণ্ডার। এটি বেশি বেশি পড়তে পারেন—

ﻻَﺣَﻮْﻝَ ﻭَﻻَ ﻗُﻮَّﺓَ ﺇِﻻَّ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ

লা হাউলা ওয়ালা ক্বুও-ওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ

অর্থ: আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কারো (গুনাহ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় নেই এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি নেই। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৩৮৪]

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘সর্বশ্রেষ্ঠ যিকর হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৩৮৩; হাদিসটি হাসান]

  • বেশি বেশি আমল করতে গিয়ে কোয়ালিটির দিকে উদাসীন হবেন না। আল্লাহর কাছে আন্তরিকতাপূর্ণ আমলের মূল্য অনেক বেশি।
  • এগুলোর বাইরে কুরআন তিলাওয়াত, মাসনুন যিকর, অনির্ধারিত বিভিন্ন যিকর, তাসবিহাত, দু‘আ ইত্যাদি তো আছেই। মোট কথা ইবাদতে লেগে থাকা। বিশেষত ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদি সুবহানাল্লাহিল আযীম’, দু‘আ ইউনুস, ‘সুবহানাল্লাহিল আযীমি ওয়া বিহামদিহ’ ইত্যাদি সব রকমের যিকর বেশি বেশি পড়া উচিত।
  • লাইলাতুল কদরের জন্য নির্ধারিত বা নির্দিষ্ট বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামাজ বা ইবাদতের কথা সহিহ বর্ণনা থেকে জানা যায় না, কেবল আয়িশা (রা.)-কে শেখানো দু‘আটি ব্যতীত, যা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। তাই, সব ধরনের নেক আমলই সাধ্যানুযায়ী কদরের রাতে করা উচিত। নামাজ পড়বেন দুই রাকাত করে, সাধারণ নফলের মতো। কোনো বিশেষ সুরা বা নিয়ম নেই।

আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লাইলাতুল ক্বদরঃ আমল, চেনার আলামত ও কিছু কথা

প্রিয়, ভাই-বোনেরা অনেকেরই হয়তো রামাদ্বান এখন পর্যন্ত আশানুরূপ যায়নি। কিন্তু, রামাদ্বানের ২১-২৩-২৫-২৭-২৯ এই ৫ টা দিন অন্তত কাজে লাগাই। সন্ধ্যার পর থেকে ফজর পর্যন্ত সময়টা অন্তত আল্লাহর জন্যে কুরবান করে দিই। পারা যাবে তো ইনশাআল্লাহ?

লাইলাতুল কদর রাত চেনার কিছু আলামত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমনঃ

  • রাতটি অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না।
  • নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না।
  • মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে।
  • সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে।
  • কোনো ইমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও দিতে পারেন।
  • ঐ রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে।
  • সকালে হালকা আলোক রশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে।যা পূর্ণিমার চাঁদের মতো।

- (সহীহ ইবনু খুযাইমাহ,হাদিস নং ২১৯০; বুখারী, হাদিস নং ২০২১; মুসলিম,হাদিস নং ৭৬২)

আমল

রমজানের শেষ ১০ দিনের যে কোন রাত লাইলাতুল কদর হতে পারে। কি আমল করব?

প্রথমত,

  • খেয়াল রাখতে হবে বড় জায়গায় ছোট বেয়াদবি ও বড় হয়ে যায়। তাই এই দিনে-রাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব গুনাহ যাতে আমার দ্বারা না হয় কোনভাবেই।
  • ঈমান বিশুদ্ধ করতে হবে। শিরক, বিদ'আত মুক্ত ঈমান নিয়ে লাইলাতুল ক্বদরের আমল করতে হবে। কেননা ঈমানহীন আমল কোন উপকারেই আসবেনা।
  • পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ একদম অন্তর থেকে দূর করে দিতে হবে নতুবা আমল কিন্তু কোন উপকারেই আসবেনা।

দ্বিতীয়ত তওবার নিয়তে কিছু নফল সালাত পড়ব ইন শা আল্লাহ।

  • চেষ্টা থাকবে শেষ দশদিনে একবার কুরআন খতম দেওয়ার। না পারলে যতটুকু সম্ভব ততটুকু।
  • মাগরিব, ইশা, ফজর, তারাবি জামাত সহকারে পড়ব।
  • সুরা ইখলাস ১০ বার পড়লে জান্নাতে একটা বাড়ির ওয়াদা আছে। কমপক্ষে ১০০ বার না পারলেও ১০ বার পড়ব।
  • খুব মনোযোগ সহকারে দুয়া করব। অবিবাহিতদের জন্যে মোক্ষম সুযোগ দুয়া কবুল করিয়ে নেওয়ার। দুয়া কবুলের শর্তগুলো ঠিক রেখে।
  • সদাকা সাধ্যমতো যা পারি করব।
  • যা যা তাসবীহ, যিকর জানা আছে। সেগুলো ১০০ বার করে পড়বো (আরবী উচ্চারণ শুদ্ধ রেখে)। যেমনঃ- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা ইলা হা ইল্লাল্লাহ, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযিম, লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, লা ইলা হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদির।
  • লাইলাতুল ক্বদর এর হাদিসে বর্ণিত দুয়া, ইস্তিগফার (সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার) আর দরুদ সাধ্যমতো পড়ব। ১০০/২০০ যা পারা যায়।

তিলাওয়াত নিজের সুবিধা মত করব। ইনশাআল্লাহ।

শেষ ১০ দিন প্রতি রাতে এই আমলগুলো করতে থাকলে আশা করি লাইলাতুলকদর এর বরকত থেকে মাহরুম হবোনা কেউই ইনশাআল্লাহ। শুরু আজ রাত থেকেই...


নবীজির সময়ে রামাদানের ২১ তম রাতটি একবার লাইলাতুল কদর ছিলো। আজ রামাদানের ২১ তম রাত। সম্ভাব্য কদরের রাত।

আবু সা‘ঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে রামাদানের মধ্য দশকে ইতিকাফ করি। তিনি ২০ তারিখ সকালে বের হয়ে আমাদের সম্বোধন করে বলেন, ‘‘আমাকে কদরের রাত দেখানো হয়েছিলো; পরে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে তার সন্ধান করো। আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমি (ঐ রাতে) কাদা-পানিতে সিজদা করছি। অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসুলের সাথে ইতিকাফ করেছে, সে যেন ফিরে আসে (অর্থাৎ মাসজিদ থেকে বের না হয়)।’’ আমরা সবাই ফিরে আসলাম। আমরা আকাশে হালকা মেঘ খণ্ডও দেখতে পাইনি। (২১ তারিখ রাতের) পরে এমনভাবে মেঘ দেখা দিলো ও জোরে বৃষ্টি হলো যে, খেজুরের শাখায় তৈরি মসজিদের ছাদ হতে পানি ঝরতে লাগলো। সালাত শুরু হলে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাদা-পানিতে সিজদা করতে দেখলাম। পরে তাঁর কপালে আমি কাদার চিহ্ন দেখতে পাই। (অর্থাৎ, নবিজির স্বপ্ন সত্য হয়েছে) [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ২০১৬]

মুহাদ্দিসগণ অনেকেই এই হাদিস থেকে ব্যাখ্যা করেছেন যে, সে বছর কদর হয়েছিলো ২১ তম রাতে। মুফতি আমিমুল ইহসান (রাহ.) সংকলিত ও ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহ.) অনূদিত ‘ফিকহুস সুনানি ওয়াল আসার’ গ্রন্থে (১/৪৮০) এই বিষয়টি টীকায় উল্লেখিত হয়েছে।

তাছাড়া পূর্বসূরি নেককার ব্যক্তিদের অনেকেই রামাদানের ২১ তারিখকে কদরের রাত মনে করতেন। ইমাম ইবনু হাজার (রাহ.) তাঁর বিশ্ববিখ্যাত সহিহ বুখারির ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফাতহুল বারি’তে এটি উল্লেখ করেছেন।

শবে কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য

বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বরকতময় রাত হলো শবে কদর। জীবন্ত মুজিজা মহাগ্রন্থ আল–কোরআন এই রাতেই প্রথম নাজিল হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মাহাত্ম্যপূর্ণ রজনীতে। আপনি কি জানেন মহিমাময় রাত্রি কী? মহিমান্বিত নিশি সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাত্রিতে ফেরেশতারা রুহুল কুদুস হজরত জিবরাইল (আ.) সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সকল বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষা উদয় পর্যন্ত।’ (সুরা-৯৭ কদর, আয়াত: ১-৫)

আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’ বা কদর রজনী, এর ফারসি হলো শবে কদর। অর্থ সম্মানিত মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত, সম্ভাবনাময়, ভাগ্যনির্ধারণী রজনী।

পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস রমজান মাস, কোরআন নাজিলের রাত শবে কদর। এ রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কা মুকাররমার জাবালে রহমত তথা হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে জিবরাইল (আ.)–এর মাধ্যমে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি কোরআন কারিম অবতীর্ণের সূচনা হয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাস! যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে মানবের দিশারি রূপে ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর সন্ধান করো।’ (মুসলিম)। এ রাতগুলো হলো ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯। আরবিতে দিনের আগে রাত গণনা করা হয়। অর্থাৎ ২০,২২, ২৪, ২৬ ও ২৮ রমজান দিবাগত রাত্রসমূহ।

মুফাসসিরিনে কিরাম বলেন, আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয়ে ৯টি হরফ বা বর্ণ রয়েছে; আর সুরা কদরে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয় তিন তিনবার রয়েছে; নয়কে তিন দিয়ে গুণ করলে বা নয়কে তিনবার যোগ করল সাতাশ হয়, তাই সাতাশ রমজানের রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। (তাফসিরে মাজহারি)। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি বলবে, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’

(‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করা পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।’) (ইবনে মাজা, আস-সিলসিলাতুস সহিহাহ, নাসিরুদ্দিন আলবানী)

পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস রমজান মাস, কোরআন নাজিলের রাত শবে কদর। এ রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কা মুকাররমার জাবালে রহমত তথা হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে জিবরাইল (আ.)–এর মাধ্যমে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি কোরআন কারিম অবতীর্ণের সূচনা হয় সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করবে; তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’(বুখারি শরিফ, ইমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ২৫, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৯-৩০, হাদিস: ৩৪; ই.ফা.)।

শবে কদরে যেসব আমল করা যায়: নফল নামাজ—তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলিল মাসজিদ, আউওয়াবিন, তাহাজ্জুত, সালাতুত তাসবিহ, তাওবার নামাজ, সালাতুল হাজাত, সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল ইত্যাদি পড়া। নামাজে কিরাআত ও রুকু–সিজদা দীর্ঘ করা। কোরআন শরিফ: সুরা কদর, সুরা দুখান, সুরা মুজাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, ইয়া-সিন, সুরা ত-হা, সুরা আর রহমান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরা তিলাওয়াত করা; দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া; তাওবা–ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা; দোয়া কালাম, তাসবিহ তাহলিল, জিকির আসকার ইত্যাদি করা; কবর জিয়ারত করা। নিজের জন্য, পিতা–মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মুমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং বিশ্ববাসীর মুক্তি কামনা করে দোয়া করা।

এই রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে অবতরণ করে বান্দাদের ডেকে ডেকে বলেন, ‘কে আছ অসুস্থ আমার কাছে চাও আমি শেফা দান করব, কে আছ অভাবগ্রস্ত আমার কাছে চাও আমি প্রাচুর্য দান করব, কে আছ বিপদগ্রস্ত আমার কাছে চাও আমি বিপদমুক্ত করে দেব।’

লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য নবীজি (সা.) শেষের ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। হজরত আয়িশা (রা.) বলেন,‘ওফাতের আগ পর্যন্ত প্রত্যেক রমজানের শেষের ১০ দিন রাসুল (সা.) ইতিকাফ করতেন।’ (বুখারি: ২৩২৬, মুসলিম: ১১৭২) ‘কিন্তু তিনি যে বছর ওফাত পান, সে বছর ২০ দিন ইতিকাফ করেন।’ (বুখারি: ৪৯৯৮)। ‘রাসুল (সা.)–এর ওফাতের পরও তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করতেন।’ (বুখারি: ২০২৬, তিরমিজি: ৭৯০)। (মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী),যুগ্ম মহাসচিব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url