OrdinaryITPostAd

স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেশের টাকায় দেশের সেতু তৈরি

পদ্মা সেতুর অফিশিয়াল নাম

"পদ্মা বহুমুখী সেতু।"পদ্মা সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেলসেতু । এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হয়েছে। সেতুটি ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয়।

পোস্টের সূচিপত্র

"পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প।(The Padma Multipurpose Bridge Project-পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় বাংলাদেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলকে আনা হয়। প্রথম ধাপে ঢাকার কমলাপুর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২৪ সালে পুরো  প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতু হল পদ্মা নদীর উপর একটি বহুমুখী সডক-রেল সেতু যা বাংলাদেশে নির্মিত হবে। বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ সড়ক ও রেল সেতু এটি লৌহজং, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর এবং মাদারীপুর সংযুক্ত টাউন বোর্ডার হিসাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল,উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করেছে পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু মধ্যে দিয়ে।

প্রাথমিক অর্থায়ন ব্যবস্থা

উন্নয়ন সহযোগিদের (WB, ADB, JICA, IDB) সাথে অর্থায়ন পরিকল্পনা এবং ঋণচুক্তি স্বাক্ষর চূড়ান্ত করা হয়েছিল।

ক্রমিক

প্রকল্প অর্থায়ন সংস্থা

পরিমাণ (মিলিয়ন মার্কিন ডলার

০১

বিশ্বব্যাংক (WB)

৬১৫.০০

০২

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)

১,২০০.০০

০৩

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি(জাইকা)

৪১৫.০০

০৪

ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক(আইডিবি)

১৪০.০০

০৫

বাংলাদেশ সরকার(জিওবি)

৬০২.০৬

 

বাংলাদেশ সরকার ০৯ জুলাই ২০১২ তারিখে তহবিল সংস্থাগুলি থেকে ঋণ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং জিওবি তহবিল/বাজেট থেকে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

বিশ্ব ব্যাংকের সাথে ঋণচুক্তি

ঋণচুক্তি টি সই হয়েছিল ২৮ এপ্রিল ২০১১ সালে (১২০ কোটি মার্কিন ডলার) বৃহস্পতিবার পদ্মা নদীতে ভাষা শহীদ বরকত নামের ফেরিতে। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাবের সচিব জনাব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে বাংলাদেশের ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টাইন চুক্তিতে সই করেন। এটি ছিল বিশ্বব্যাংক পক্ষে কোনো বিশ্বের একক প্রকল্পের নামে এটাই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় ‍ঋণ প্রদান। বিশ্ব ব্যাংকের সাথে এই ঋণ চুক্তির মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর জন্য অর্থায়নের একটি বড় অংশ নিশ্চিত হলো এমনটা জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা। বিশ্বব্যাংকের এই ঋণ আগামী ৪০ বছর ধরে পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। পদ্মা সেতুর অর্থায়নের জন্য অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগিদের সাথে সেতু বিভাগের চুক্তিবদ্ধ হয়ে ঋণের পরিমাণ এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক ৬১৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার,জাপানের জাইকা ৪০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক দিবে ১৪০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। ঋণের বিষয়ে সবার সাথে আলোচনা শেষ তখনও শুধু চুক্তি স্বাক্ষর বাকি। পদ্মা সেতুর জন্য বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ৬০০ মিলিয়ন ডলার যোগান দিবে বলে জানা যায়। চার লেনের এই সেতু দ্বিতল বিশিষ্ট হবে। উপরে অংশ সড়ক যোগাযোগের জন্য আর নিচের অংশ হবে রেলের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। টোলের টাকা তুলে তা থেকে উন্নয়ন সহযোগিদের ঋণের টাকা পরিশোধ করা হবে এমনটা বলেছেন সেতু বিভাগ।

বিশ্বব্যাংক চুক্তি বাতিল কর

বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থ সহায়তা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পর সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একে ‘বিনা মেঘে বজ্রপাত’ বলে মন্তব্য করেছেন। বিশ্বব্যাংক চুক্তি বাতিল করেন ৩০ জুন ২০১২ সালে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই যে বিশ্বব্যাংক এই ঋণ চুক্তি বাতিল করেছে ওবায়দুল কাদের তাকে ‘বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের সঙ্গে অবিচার’ বলে মন্তব্য করেন।

পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়

২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর মূল পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণকাল চলাকালীন দেশি-বিদেশি উৎপেতে থাকা হায়ানার দল নানাধরনের ষড়যন্ত্র করতে থাকে। তারপরেও দমিয়ে রাখতে পারে নাই। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু নির্মাণকাল (নভেম্বর ২০১৪ থেকে ২০১৮ (০৪) চার বছর নিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম। pdpadmabridge@yahoo.com

পদ্মা সেতু সংযোগকারী স্থান

মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার এবং শরীয়াতপুরের জাজিরা প্রান্ত। (পদ্মা সেতুর অবস্থান ০৩ টি জেলায়-মুন্সিগঞ্জ মাদারীপুর শরীয়াতপুর) পদ্মা সেতু সংযোগ স্থাপন করবে ২৯ টি জেলার সাথে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমের ২১ জেলার সাথে।

প্যাকেজ এবং ঠিকাদারের নাম

  • প্রধান সেতুর কাজ; চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড,চায়না।
  • নদী প্রশিক্ষণের কাজ: সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড, চীন।
  • জাঞ্জিরা অ্যাপ্রোচ রোড এবং নির্বাচিত সেতু শেষের সুবিধার কাজ: AML-HCM JV.
  • মাওয়া অ্যাপ্রোচ রোড এবং নির্বাচিত সেতু শেষ সুবিধার কাজ:>AML-HCM JV.
  • সার্ভিস এরিয়া ০২ কাজ; আব্দুল মোনেম লিমিটেড (এএমএল)

পদ্মা সেতুতে থাকছে যে সুবিধা

পদ্মা সেতুতে কি কি সুবিধা পাচ্ছি তা এক নজরে দেখে নিতে পারি। ৭৬ মিলিমিটার গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইন, ১৫০ মিলিমিটার ফাইবার অপটিক্যাল ও টেলিফোন লাইন/ডাক্ট এবং হাই ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক লাইন প্ল্যাটফর্ম প্রধান সেতুর ২ কিলোমিটার নিচের দিকে পাইল ফাইন্ডেশনের উপর নদীতে।

পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক কত কিলোমিটার

পদ্মা সেতুর দুই অংশের মূল সড়কের সাথে সংযুক্ত করতে হয়েছে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত। দুই প্রান্তের অ্যাপ্রোচ রোড বা সংযোগ সড়ক। জাজিরা প্রান্তের মূল অ্যাপ্রোচ সড়কটি ১০ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আর আশপাশের স্থানীয় সড়কগুলো সংযোগ দিতে নিমার্ণ করা হয়েছে আরও ১২ কিলোমিটার সার্ভিস সড়ক। এছাড়া মাওয়া প্রান্তে ১ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়কের সঙ্গে যোগ করা হয়েছে ৩ কিলোমিটার সার্ভিস সড়ক। সবমিলিয়ে সংযোগ সড়ক নিমার্ণে ব্যয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার। পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক ১৪ কিলোমিটার।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন ব্যয়

পদ্মা সেতু এলাকাতে নদী ভাঙ্গনসহ যেকোনো দুযোর্গ থেকে রক্ষায় প্রকল্প এলাকার জায়গায় প্রায় ১৪ কিলোমিটার নদীশাসন করতে হচ্ছে। এরমধ্যে মাওয়া এলাকায় ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার এবং জাজিরা প্রান্তে ১২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার নদীশাসন করা হয়েছে। এই কাজ বাস্তবায়ন করেছে চীনের কোম্পানি সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড। এই প্রকল্পে নদীশাসন ব্যয় বাবদ খরচ হয়েছে আট হাজার সাতশো সাত কোটি ৮১ লাখ টাকা। পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট খরচ করা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি। বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। দুই পাড়ে ১৪ কিলোমিটার।

পদ্মা সেতুর নদী শাসনের কাজ

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বহু আকাঙিক্ষত সেতুটিকে নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- নদী শাসন সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে পদ্মার নদী শাসনের কাজ সমাপ্তি হয়েছে পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকার সৌন্দর্য অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। নদীশাসন মতন গুরুত্বপূর্ণ কাজটি পায় চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন।

পদ্মা সেতুর নকশা করেন

পদ্মা সেতুর নকশার দায়িত্ব ছিল নিউজিল্যান্ড ভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এইসিওম (AECOM (Architecture, Engineering Consulting Operation and Maintenance)নকশা ও প্রকৌশল পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯০ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। তবে তাদের ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে, তাদের প্রতিষ্ঠানের বয়স ১২০ বছর। পদ্মা সেতুর পাইল সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেয় কাউই

পদ্মা সেতুর তদারকির দায়িত্ব

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের তদারকি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের নাগরিক রবার্ট জন এভস। পদ্মা সেতুর পুরো নির্মাণ কাজ তদারকির কাজ পেয়েছিল কোরিয়ান কোম্পানি কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন (কেইসি)। তাদের কাজ ছিল পুরো নির্মাণ কাজটি ঠিক মতো হচ্ছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করা। দায়িত্বে রয়েছে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে এবং বাংলাদেশ সূর্য সন্তান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

পদ্মা সেতু দ্বিতলবিশিষ্ট

দ্বিতল পদ্মা সেতু এক অংশ থাকবে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায়,আরেক অংশ শরীয়তপুরের জাজিরায়। পদ্মা সেতুটি নির্মাণ করেছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। মূল সেতুতে কংক্রিট ও স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে। চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে উপকরণ ক্রয় করে ব্যবহার করা হয়েছে সেতুটিতে। প্রায় ২ লাখ ৮৯ হাজার টন স্টিলের প্লেট প্রয়োজন হয়েছে। অধিকাংশ উপকরণ চীনসহ,অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারত থেকেও অন্যান্য উপকরণ কেনা হয়েছে। কংক্রিট এবং স্টিলের তৈরি (যা বিশ্বে প্রথম)।

পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য

দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা -ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য কিলোমিটার (২০১৭৭.১৭) ফুট এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার (৫৯,৩৮৩২) ফুট পদ্মা সেতুর মোট দৈর্ঘ্য পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার । ৪১*১৫০= ৬১৫০ মিটার। মোট ৭ টি মডিউল প্রতিটি ৬টি মডিউলে ৬ টি স্প্যান এবং একটি মডিউলে ৫ টি স্প্যান। ২২ মিটার চওড়া কংক্রিট ডেক স্ল্যাব (দুই পাশে ২.৫ মিটার শক্ত কাঁধ) কিলোমিটার সংযোগ সড়ক)।

পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ

নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। এর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার অর্থ্যৎ ৫৯,৪ ফুট প্রস্থে ৭২ ফুটের চার লেনের সড়ক। রেললাইন স্থাপন হবে এর নিচতলায়। পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক হবে দুই প্রান্তে ১৪ কিলোমিটার।

পিলার

প্রতিটি পিলারের জন্য পাইলিং ৬ টি, তবে মাটি জটিলতার কারণে ২২ টি পিলারের পাইলিং হয়েছে ০৭টি করে, মোট পাইলিং ২৮৬ টি, পাইলিং এর গভীরতা ৩৮৩ ফুট।)

স্প্যান

প্রতিটি ১৫০ মিটার (স্থলমুখী প্রান্তে ২ ট্রানহিশন পিয়ার এবং ৪০ কেন্দ্রপিয়ার) কম্পোজিট সুপারস্ট্রাকচার (ওয়ারেন টাইপ স্টিল ট্রস গার্ডার এবং উপরে ডেকে কংক্রিট) প্রতিটি স্প্যানের ওজন ৩২০০ টন। স্প্যান বহনকারী জাহাজ তিয়ান-ই। (ধারণক্ষমতা ৩৬০০ টন)। প্রথম স্প্যান বসানো হয় ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর (৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের উপর)। ৪১ তম অর্থাৎ শেষ স্প্যান বসানো হয় ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর (বিশ্ব মানবাধিকার দিবস) (১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের উপর দুপুর ১২.০২ মিনিটে) ৪১ টি স্প্যান বসাতে সময় লাগে ৩ বছর ২ মাস ১০ দশ দিন। পদ্মা সেতুতে রেল লাইন স্থাপন হবে নিচতলায় অর্থাৎ স্প্যানের মধ্য দিয়ে। (মিটারগেজ ও ব্রডগেজ এক‌ই ‌‌ সময় যেকোনো একটি ট্রেন চলাচল করতে পারবে)

পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট

মাওয়া প্রান্ত (উত্তর তীর):

১৯+২০=৩৯ স্প্যান;

দৈর্ঘ্য

=১৪৭৪.০৩ মিটার

জাঞ্জিরা প্রান্ত (উত্তর তীর):

১৯+২৩= ৪২ স্প্যান,

 দৈর্ঘ্য

=১৬৭০.০৩ মিটার

মোট

রোড ভায়াডাক্ট পিলার:

৮১ টি স্প্যান;

মোট দৈর্ঘ্য = ৩১৪৮.০৬ মিটার




পদ্মা সেতুতে কার্পেটিং শুরু

কার্পেটিং (বিটুমিনাস ওয়ার্ক) শুরু হয়েছে বুধবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে কার্পেটিংয়ের ১০ নভেম্বর ২০২১ সালে কাজ শুরু হয়। পদ্মার বুক জুড়ে সগৌরবে দৃশ্যমান স্বপ্ন ও সাহসের ‘পদ্ম’। শনিবার ২৫ জুন ২০২২ সালে সেতু যানবাহন চলাচলের মধ্য দিয়ে স্বপ্ন পূরণ, অমিত সম্ভাবনা। চলাচল আসবে গতিময়। বাড়বে প্রবৃদ্ধি, আসবে সমৃদ্ধি।

প্রকল্পের আনুমানিক খরচ (চূড়ান্ত নকশা অনুযায়ী) প্রকল্প ব্যয়ের খরচ চূড়ান্ত নকশা অনুযায়ী ৳ ৩০,১৯৩৩.৭ মিলিয়ন টাকা এবং ইউএসডি ৳ ৩.৮৬৮ বিলিয়ন (ভ্যাট এবং আইটি সহ। ৩০. ভূমিকম্প সহনশীল কিনা

বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ একটি দেশ। দুর্যোগপ্রবণ এ দেশের খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে ‘পদ্মা সেতু’। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসছে, বহুল কাঙ্ক্ষিত এ সেতুটি কতটা ভূমিকম্প সহনশীল? তবে পদ্মা সেতুর নির্মাণসংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। তারা বলছেন, রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকবে পদ্মা সেতু। কারণ এ সেতুতে ডাবল কারভেচার ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের সক্ষমতা ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। মাত্রা ৯ রিখটার স্কেল। পদ্মা সেতুর স্থানাঙ্ক ২৩.৪৪৬০ ডিগ্রী (উত্তর),৯০.২৬২৩ ডিগ্রি (পূর্ব)। পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা ৬০ ফুট (১৮ মিটার)

পদ্মা সেতুর কাছাকাছি সামরিক সেনানিবাস

শেখ রাসেল সেনানিবাস হল বাংলাদেশের শরীয়াতপুর জাজিরা প্রান্তে অবস্থিত একটি সেনানিবাস। থ্রিমাত্রিক প্রটেকশন সক্ষমতা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই সেনানিবাসের। পদ্মা সেতু যেকোনো নিরাপত্তা প্রশ্নে এই সেনানিবাস বদ্ধপরিকর। শেখ রাসেল সেনানিবাস সকল সক্ষমতা নিয়ে স্থাপনা করা হয়েছে। পদ্মা সেতু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলো অন্যতম দাবিদার বিশেষকরে স্বাধীনতা পরের বছরগুলোতে এই যাবৎকালের বাংলাদেশের সবচেয়ে গর্ব করার স্থাপনা। ২৯ মার্চ ২০২২ তারিখে এই সেনানিবাস উদ্ধোধন ঘোষণা করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পদ্মা সেতুর কাছাকাছি থানা

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে ২০২২ সাল উদ্ভোধন আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে বড় প্রকল্পের গুলো প্রথম স্থান অধিকার করে রয়েছে। এত বড় স্থাপনা জাতীয় নিরাপত্তাস্বার্থে (০২) টি = পদ্মা সেতু উত্তর (পদ্মা সেতু উত্তর থানা, পদ্মা সেতু উত্তর থানা মুন্সীগঞ্জ জেলার একটি থানা), পদ্মা সেতু দক্ষিণ (পদ্মা সেতু দক্ষিণ, বাংলাদেশে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার, স্থানাঙ্ক: ২৩ ডিগ্রী ২৪ উত্তর। দীর্ঘতম সড়ক সেতু পদ্মা সেতু (পূর্বে ছিল যমুনা সেতু ৪.৮ কিলোমিটার, পিলার ৫০ টি, স্প্যান ৪৯ টি)।

পদ্মা সেতু

ভূপেন হাজারিকা সেতু বা ঢোলা-সাদিয়া সেতু হল পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যে লোহিত নদীর উপর নির্মিত একটি সেতু দীর্ঘতম সড়ক সেতুর নদীর উপর নির্মিত বিশ্বের প্রথম দীর্ঘতম সেতু। বিশ্বের ১১তম দীর্ঘ সেতু। নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। এর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। প্রস্থে ৭২ ফুটের চার লেনের সড়ক। রেললাইন স্থাপন হবে এর নিচ তলায়। পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক হবে দুই প্রান্তে ১৪ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পে জনবল প্রায় ৪ হাজার। সেতুর ভায়াডাক্ট পিলার হবে ৮১টি। পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা ৬০ ফুট। এই সেতুর পাইলিং গভীরতা ৩৮৩ ফুট। প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং ৬টি। পদ্মা সেতুর মোট পাইলিং সংখ্যা ২৬৪টি। পদ্মা সেতুতে থাকবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন পরিবহন সুবিধা। সেতুর পিলার সংখ্যা ৪২টি। পদ্মা সেতু প্রকল্পে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড।

বৃহত্তম সড়ক সেতুর লাটিং ডিজাইন

বৃহত্তর পদ্মা সড়ক সেতুর লাটিং ডিজাইন ল্যাম্পপোস্ট মোট ৪১৫ টি। মূল সেতুতে ৩২৮ টি। ভায়াডাক্টে ৮৭ টি।(এশিয়ার ২য়) পদ্মা সেতুর শেপ হবে "S" আকৃতির। পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ করেছে প্রায় ৪ হাজার মানুষ। পদ্মা সেতুর প্রয়োজনে মোট ভূমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে দুই হাজার ৬৯৩ দশমিক ২১ হেক্টর জমি। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় জমি অধিগ্রহণে খরচ হয়েছে মোটা অংকের টাকা। যাদের অধিগ্রহণ করা হয়েছিল তাদেরকে দুই হাজার ৬৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ৯১৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পদ্মা সেতুতে মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। টোল আদায় করে ব্যয় উঠাতে সময় লাগবে ৩৫ বছর। আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১০০ বছর। জিডিপি বৃদ্ধি পাবে ১.২৩ শতাংশ। পদ্মা সেতু রক্ষণাবেক্ষণ করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষপদ্মা সেতুর ওয়েবসাইট এড্রেস=www.padmabridge.gov.bd পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে এই গুজব উঠে জুলাই, ২০১৯ (যা মিথ্যা ছিল)।

সেতু উদ্বোধন

২৫শে জুন ২০২২। (বাংলা=১১ আষাঢ়, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ) (আরবি= ২৫ জিলকদ, ১৪৪৩ হিজরি) অনেক ঝাকজকম আনন্দঘন মধ্যে দিয়ে পদ্মা সেতু উদ্ভোধন ঘোষণা করেন মাননীয় প্রধান শেখ হাসিনা। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে দেশের সরাসরি ২১ টি জেলা মিলে প্রায় ২৯ টি জেলা নানাদিক দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক,রাজনীতি,সবধরনের উপকারে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শতবাধা বিঘ্ন এড়িয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু সর্বনাশা পদ্মার বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিশ্বের আমাজনের নদীর পরে দ্বিতীয় নদী প্রচুর খরস্রোতা যা প্রধান চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হয়েছে প্রকৌশবিদগণের আর সাথে জড়িত ছিল নানাবিধ কাজের সঙ্গে। সর্বোপরি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জয়লাভ করে আজকের সোনালি দিনের আলোয় আলোকিত ১৬ কোটি বাঙালি আনন্দমুখর দিন কেটেছে।

পদ্মা সেতু টোল রেট

পদ্মাসেতু অর্থনৈতিক গুরুত্ব

খাদ্যভান্ডার হিসাবে বহুল আলোচিত অঞ্চলের নাম দক্ষিণাঞ্চল। সুখ্যাতি যাকিছু অর্জন হয়েছিল এতদিনে এই অঞ্চলটি পুরোপুরি কাজে লাগানোর সম্ভব হয়নি। শরীয়তপুর,মাদারীপুর ও ফরিদপুর পেঁয়াজ ও রসুনের উৎপাদন বাড়বে। তাছাড়া কৃষকের আগ্রহ বাড়বে পাটচাষে।গড়ে উঠবে পাটভিত্তিক শিল্প। বরিশাল ও পটুয়াখালী তরমুজ, নারকেল ও সুপারি চাষ হয় সমতল ভূমিতে পান ও তেজপাতা চাষ। পটুয়াখালীতে মুগ ডালের চাষ হয় বাণিজ্যিকভাবে যা জাপানসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের রপ্তানি করা হয়। যশোর ও ফরিদপুরের খেজুরের গুড়ের কদর আছে দেশজুড়ে। তাছাড়া পোলট্রি শিল্পের সম্প্রাসারণ ঘটবে এই অঞ্চলটিতে। দানাদার খাদ্য সহজে পরিবহনসহ দুধ ও মাংস প্রক্রিয়ারকরণ শিল্পের বিকাশ ঘটবে সুতরাং বাড়বে কর্মসংস্থান। সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনা মৎস্য উৎপাদনে আরও বেশি বিকাশ ঘটবে। রেণু পোনাসহ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে যশোরে। ইপিজেড, পাটকল,চালকল পুরোমাত্রাই বিকশিত হবে ফলে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দর সঙ্গে রাজধানীর ও চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে যাতে৷ ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার ঘটবে। নিজ অর্থয়ানে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক সাহসী পদক্ষেপ। এবার পদ্মা সেতু মাধ্যমে সারাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে একীভূত হলো দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল। পদ্মা বহমুখী সেতুর মাওয়া-জাজিরা পয়েন্ট দিয়ে নির্দিষ্ট পথের মাধ্যমে রাজধানীর সাথে দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সরাসরি সংযোগ স্থাপন হল। এই সেতুটি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত অঞ্চলের সামাজিক,অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। প্রকল্পটির ফলে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪৪,০০০ বর্গ কিঃমিঃ (১৭,০০০ বর্গ মাইল) বা বাংলাদেশের মোট এলাকার ২৯% অঞ্চলজুড়ে ৩ কোটিরও অধিক জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে। ফলে প্রকল্পটি দেশের পরিবহন নেটওয়ার্ক এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। সেতুটিতে ভবিষ্যতে রেল, গ্যাস, বৈদ্যুতিক লাইন এবং ফাইবার অপটিক কেবল সম্প্রসারণের ব্যবস্থা রয়েছে। এই সেতুটি নির্মিত হলে বাংলাদেশের জিডিপি ১.২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।

সেতু উদ্ধোধন উপলক্ষে পদ্মাপাড়ের দুই পাড়কে সাজানো হয়েছে। উল্লেখযোগ্য স্থাপনাসমূহ ও ভবনগুলো আলোকিত করা হয়েছে। ব্রিজ বা স্বপ্নের পদ্মাসেতু উদ্ধোধন অনুষ্ঠান দেখার জন্য দেশের মানুষ দারুণভাবে উচ্ছ্বসিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url