OrdinaryITPostAd

জরায়ু কেটে ফেলার পর মহিলাদের কি কি সমস্যা হয়?

জরায়ু যার ল্যাটিন শব্দ “ইউটেরাস” বা গর্ভ। মানুষসহ বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জননতন্ত্রের একটি প্রধান হরমোন-প্রতিক্রিয়াশীল স্ত্রী গৌণ-জননাঙ্গ। মানুষের ক্ষেত্রে, জরায়ুর নিম্নপ্রান্ত, জরায়ুমুখ, যোনিপথে উন্মুক্ত হয় এবং এর ঊর্ধ্বাংশ, ফান্ডাস, ডিম্বনালীর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। গর্ভকালে এই জরায়ুর মধ্যেই গর্ভস্থ ভ্রূণ বড়ো হতে থাকে। জরায়ু এমন একটি স্ত্রী অঙ্গ যার মাধ্যমে কোনো মহিলা বাচ্চা ধারন করার ক্ষমতা রাখে। 

জরায়ু-কেটে-ফেলার-পর-মহিলাদের-কি-কি-সমস্যা-হয়

কিন্তু এই জরায়ু যদি কেটে ফেলা হয় তাহলে কি কি সমস্যা হতে পারে? আসুন আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে জেনে নিইজরায়ু কেটে ফেলার পর কি কি সমস্যা হয়?

পোস্ট সূচিপত্রঃ

জরায়ু কেন কেটে ফেলা হয়?

জরায়ু বা ইউটেরাস মহিলাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্গান। এটা বাচ্চা ধারণ করে এবং এখান থেকে প্রতি মাসে পিরিয়ডের ব্লিডিং হয়। তবে পৃথিবীতে মহিলাগুলো তাদের জরায়ু বিভিন্ন কারনে কেটে ফেলে। আসুন জেনে নিই জরায়ু কোন কোন কারনে কেটে ফেলা হয়:

  • ফাইব্রয়েড টিউমার, এডিনোমাইসিস এর কারনে।
  • এন্ডোমেট্রিওসিস হওয়ার জন্যে।
  • পিরিয়ডের সময় প্রচুর রক্তপাত হলে বা প্রচন্ড ব্যথা হলে।
  • ইউটেরাইন প্রলাপ্স অর্থাৎ জরায়ু নিচে নেমে আসলে।
  • জরায়ুতে যেকোনো ক্যান্সার এর কারনে ।

ইত্যাদি আরোও বিভিন্ন কারনে জরায়ু কেটে ফেলা হয়।

জরায়ু কেটে ফেলার অপারেশন কিভাবে করা হয়?

যোনির শীর্ষে তৈরি ছেদের মাধ্যমে গর্ভাশয় এবং জরায়ু কেটে ফেলা হয়। গর্ভাশয়টিকে স্বস্থানে ধরে থাকা লিগামেন্টগুলি থেকে পৃথক করার জন্য যোনিতে বিশেষ অস্ত্রোপচারের যন্ত্র প্রবেশ করানো হয়। এরপর গর্ভাশয় এবং জরায়ু কাটার পরে, কাটা স্থানটি সেলাই করা হয়। যেটাকে ভ্যাজাইনাল হিস্টেরেক্টমি বলে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জরায়ু কেটে ফেলা হয়। যেমন:

  • অ্যাবডোমিনাল হিস্টেরেক্টোমি – পেটের একটি ছেদ করার মাধ্যমে জরায়ু কেটে ফেলা হয়।
  • পেটে ন্যূনতম ছেদনের মাধ্যমে ল্যাপারোস্কোপিক হিস্টেরেক্টোমি করে জরায়ু কেটে ফেলা হয়।
  • পেটে ন্যূনতম ছেদনের মাধ্যমে রোবোটিক হিস্টেরেক্টোমি করে জরায়ু কেটে ফেলা হয়।
  • হিস্টেরোস্কোপি, ল্যাপারোস্কোপি, রোবোটিক সার্জারি ব্যবহার করেও করে জরায়ু কেটে ফেলা হয়।

জরায়ু কেটে ফেলার জন্য বাংলাদেশে কত টাকা খরচ হয়?

জরায়ু অপারেশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন। তাই আমাদের বাংলাদেশে এটি একটি ব্যয়বহুল অপারেশন। আমাদের বাংলাদেশে মোটামুটি ৩০,০০০-৩৫,০০০ টাকা লেগে যায়। তবে সেবা, স্থান, পরিবেশ অনুযায়ী টাকার পার্থক্য দেখা দিতে পারে। তবে আপনি যেখানেই অপারেশনটি করান না কেন সেবা ও পরিবেশের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। কারন টাকার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশী।

আরো পড়ুনঃটিউমার ভালো করার ৯টি উপায়

জরায়ু কেটে ফেলার পর প্রথম সমস্যা হল মাসিক এর সমস্যা

নারীদের মাসিক হওয়ার মূল কারণ ইস্ট্রোজেন নামের একটি হরমোন। এই হরমোন নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য চক্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের ওভারি বা ডিম্বাশয়ে প্রতিমাসে যে ডিম্ব উৎপাদন হয় এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য নারীর শরীর যেভাবে প্রস্তুত হয় তার পেছনেও রয়েছে এই হরমোনের ভূমিকা। কিন্তু বয়স হতে থাকলে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদন কমে যেতে থাকে। এই হরমোনই প্রজননের পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

জরায়ু কেটে ফেলার পর নারীদের মাসিক পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এতে নারীদের শরীরে নানা প্রভাব দেখা দেয়। যেমন রাতের বেলায় ঘাম হওয়া, ঘুম না হওয়া, দুশ্চিন্তা হওয়া, মনমরা ভাব এবং যৌনতায় বা মিলনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। এছাড়া মূত্রথলিতে সমস্যা এবং যোনিপথ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার ঘটনাও দেখা দিতে পারে।

জরায়ু কেটে ফেলার পর বাচ্চা ধারন সমস্যা

আসলে মহিলাদের বাচ্চা হয় জরায়ুতে ডিম্বকের নিষিক্ত হওয়ার ফলে। যদি দেখা যায় কোনো মহিলার ডিম্বাশয় নেই, সেক্ষেত্রে তার বোনের কাছ থেকে বা তার রিলেটিভের কাছ থেকে অথবা অন্য কারো কাছ থেকে (যেটাকে বলা হয় ডোনার এগ) সেই ডিম্বাশয়টা নিয়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করা যায়। কিন্তু জরায়ু কেটে ফেলার পর মহিলাদের বাচ্চা ধারনের ক্ষমতা একেবারেই শেষ হয়ে যায়। কারন জরায়ুতে ডিম্বক নিষিক্ত হয় তাই সেটা না থাকলে ডিম্বক নিষিক্ত হয় না আর বাচ্চা ও কনসিভ হয না।

তবে বর্তমানে জরায়ু ছাড়াও বাচ্চার মা হওয়া যায়। জরায়ু কেটে ফেলার পর ঐ মহিলার ডিম্বানু ও তার স্বামীর শুক্রানু বাইরে নিষিক্ত করে তার বোনের বা কোনো রিলেটিভের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করলে ওখানে বাচ্চাটা ধীরে ধীরে পরিণত হলে প্রসব করানো যায়। এভাবে যে শিশু পৃথিবীর আলো দেখে সেটি কিন্তু তাদেরই বাচ্চা। যদিও এটি আমাদের দেশে আইনগত ভাবে নিষিদ্ধ।

জরায়ু কেটে ফেলার পর সহবাস এর সমস্যা

জরায়ু অর্গাজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে জরায়ু কেটে ফেলার পর মহিলাদের ক্লিটোরেসিস বা জি স্পট সিমুলেশন অর্গাজম করাতে পারে। তাই জরায়ু কেটে ফেলার পর যে কোনো মহিলা সহবাস করতে পারবেন। তবে জরায়ু কেটে ফেলার কতদিন পর সহবাস করা যাবে? এটা অবশ্য রোগীর কন্ডিশনের উপর ভিত্তি করে সময় কম বেশি হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের জাম খাওয়ার ১০টি উপকারিতা

মানে একেক রোগীর ক্ষেত্রে একেক রকম সময় লাগতে পারে। সাধারণত ১-২ মাস পর্যন্ত বিরত থাকা ভালো। সবথেকে ভালো হয় আপনার ডাক্তার যতদিন সুস্থ বলে ঘোষনা না দিবেন ততদিন পর্যন্ত সহবাস থেকে বিরত থাকা। তবে অবশ্যই এক মাসের আগে সহবাস করা যাবে না। তাহলে ক্ষতি হতে পারে। জরায়ু কেটে ফেলার ২ মাস পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সহবাস করতে পারবেন।

জরায়ু কেটে ফেলার পর মহিলাদের কোন ধরনের খাবারে সমস্যা হয়

জরায়ু কেটে ফেলার পর মহিলাদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। জরায়ু কেটে ফেলার পরের দিন থেকেই রোগী সব ধরনের খাবার খেতে পারবেন। অনভ্যস্ত কোনো খাবার না খাওয়াই ভালো। দুধ, ডিম, টক জাতীয় ফল ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে। অনেকে উল্টো ভাবেন এবং রোগীর খাওয়া-দাওয়ায় অনেক বিধিনিষেধ দিয়ে দেন। ফলে ভালোর চেয়ে মন্দই বেশি হয়। তাই রোগীর পছন্দমত, পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হবে।

অতিরিক্ত গ্যাস বা অ্যাসিডিটি হয় এমন কোনো খাবার না খাওয়াই ভালো। তবে প্রতিটা ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।

জরায়ু কেটে ফেলার পর মহিলাদের কি কি নিয়ম কানুন মেনে চলা উচিত

জরায়ু কেটে ফেলার পর মহিলাদের কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলা উচিত। জরায়ু কেটে ফেলার পরের দিন থেকেই হালকা হাঁটাচলা করবেন। দেড় মাস পর থেকে স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে পারবেন। ডাক্তারের দেয়া ওষুধ ও চেকআপের নির্দেশনা ঠিকমত মেনে চলবেন। পেটে বেল্ট বা বাইন্ডার ব্যবহার করবেন না। এতে প্রাথমিক অবস্হায় ঘেমে এবং বাতাস চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার কারণে ইনফেকশন হতে পারে। অনেকদিন ব্যবহার করলে আপনার পেট ঢিলা হয়ে যাবে এবং হার্নিয়াও হতে পারে।

জরায়ু কেটে ফেলার সাতদিন পর থেকে আপনার ব্যান্ডেজ খুলে এবং যদি সেলাই থাকে সে সেলাই খোলার পর সাবান ও পানি দিয়ে আপনার ক্ষতস্হান পরিষ্কার করে ধুয়ে গোসল করবেন নিয়মিত। খেয়াল রাখবেন ক্ষতস্হানে যেন কোনো ময়লা না জমে। তবে ক্ষতস্হানে কোনো স্যাভলন, ডেটল ও মলমের প্রয়োজন হয় না।

জরায়ু কেটে ফেলার পর মহিলাদের নিয়ম কানুন না মানলে কি ধরনের সমস্যা হয় 

জরায়ু কেটে ফেলার পর মহিলাদের সঠিক নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। তাছাড়া নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন জরায়ু কেটে ফেলার পর প্রথম ২মাস বেশী হাটাহাটি করলে অতিরিক্ত ব্যাথা হতে পারে। কাটা স্থানে ইনফেকশন হতে পারে। কাটা ঘাঁ শুকাতে অনেক সময় লেগে যাবে।  অনেক সময় সেখানে ক্যান্সারও সৃষ্টি হতে পারে।

তাই জরায়ু কেটে ফেলার পর ১ম দেড় মাস মোটামুটি বিশ্রামেই থাকতে হবে। তারপর থেকে সাধারণ কাজকর্ম, জার্নি শুরু করা যেতে পারে। তিন মাস কোনো ভারি কাজ করবেন না। তিন মাসের মধ্যে কাশি বা কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। আর এগুলো হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিন।

জরায়ু কেটে ফেলার পর মহিলাদের সুস্থ হতে কতদিন সময় লাগে?

জরায়ু কেটে ফেলার পর দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই রোগীকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন। এবডোমিনাল হিস্ট্রেকটমির ক্ষেত্রে সাধারণত রোগী চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবে, ভ্যাজাইনাল এবং ল্যাপরোস্কোপিক অপারেশনের ক্ষেত্রে আরো আগেই অর্থাৎ চার সপ্তাহের মধ্যে রোগী সুস্থ হতে পারে। তবে জরায়ু কেটে ফেলার পর মহিলাদের অন্তত ২ মাস চেকআপের উপর থাকা উচিত। ২ মাসের আগে সহবাস না করা উচিত। পুস্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ চুল ঘন করার উপায় ৭ দিনে 

জরায়ু কেটে ফেলার পর মহিলাদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো কি কি?

জরায়ু কেটে ফেলার পর মহিলাদের এক থেকে দুই সপ্তাহ ধরে যোনি রক্তক্ষরণ হতে পারে। এটি হালকা মাসিকের মতো এবং লাল বা বাদামী বর্ণের হয়। কিছু মহিলাদের প্রাথমিকভাবে সামান্য বা একেবারেই রক্তপাত না ও হতে পারে এবং তারপরে ১০ দিন পরে হঠাৎ করে পুরানো রক্ত বা স্রাবের নিঃসরণ দেখা দিতে পারে। তবে এটি সাধারণত দ্রুত থেমে যায়। এক্ষেত্রে আপনার ট্যাম্পোনের ছেড়ে স্যানিটারি তোয়ালে ব্যবহার করা উচিত কারণ ট্যাম্পোনের ব্যবহারের ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

জরায়ু কেটে ফেলার পর প্রথম কয়েকদিন তলপেটে ব্যথা এবং অস্বস্তি হতে পারে। জরায়ু কেটে ফেলার পর মলত্যাগ কিছুদিনের জন্য কমে যেতে পারে, যার ফলে বাতাস বা ‘গ্যাস’ আটকা পড়ে। এটি বেরিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। তবে একবার মলত্যাগ ঠিকভাবে শুরু হলে, আটকে থাকা গ্যাস বেরিয়ে আসবে। এছাড়া রোগীর হাত পা জ্বালা করা, অস্থিরতা, ঘুমের সমস্যা, মুড সুইং, সহবাসের অনীহা, শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তাহলে আজকে আমরা জরায়ু কেটে ফেলার পর মহিলাদের কি কি সমস্যা হয় এই বিষয় সম্পর্কে জানলাম। তো আজ এই পর্যন্তই, নিজের খেয়াল রাখুন সুস্থ থাকুন। আসসালামু আলাইকুম।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url