OrdinaryITPostAd

ইসলামে তালাক দেওয়ার নিয়ম ও সমস্ত বিধান

ইসলামে তালাক সবচেয়ে নিকৃষ্ট হালাল কাজ। একান্ত প্রয়োজন এর ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা থেকে মুক্তি লাভের জন্য শরীয়ত তালাক দেওয়া নিয়ম বা অনুমতি ঘোষণা করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহের চুক্তি অন্যান্য চুক্তির মত নয়। একদিকে যেমন চুক্তি, অপরদিকে ইবাদতও বটে।

  ইসলামে-তালাক-দেওয়ার-নিয়ম-তালাক-দেওয়ার-নিয়ম

তালাক দেওয়ার নিয়ম এর ক্ষেত্রে ইসলামী বিশেষভাবে লক্ষ্য গুরুত্ব দিয়েছে। কারণ এই সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিণাম শুধু স্বামী-স্ত্রী পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং এতে উভয় পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সন্তানাদি থাকলে তাদের জীবন বরবাদ হয়ে যায়। 

এইজন্য শরীয়তে বিবাহের চুক্তি ভঙ্গ করা তথা তালাক দেওয়ার নিয়ম অন্যান্য মুআমালার চেয়ে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। যদি কখনো স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বনি-বনা না হয় এবং একজন অপরজনের হক আদায় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় তখন তালাক দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে।

পোষ্ট সূচি পত্রঃ ইসলামে তালাক দেওয়ার নিয়ম-তালাক দেওয়ার নিয়ম

মুখে তালাক দেওয়ার নিয়ম

তালাক দেওয়ার নিয়ম এর  ক্ষেত্রে ইসলাম কঠোরতা অবলম্বন করেছে। ইচ্ছা করলেই একটা সমস্যা কি করিয়ে মুখে এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক বলে দেওয়ার মাধ্যমে তালাক দেওয়ার নিয়ম সঠিকভাবে পালন হবে না। তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী বৈধ কারণ থাকতে হবে। তারপর লিখিতভাবে এবং মুখে তালাক দেওয়ার নিয়ম কার্যকর হবে।

স্ত্রী তালাক দেওয়ার নিয়ম

ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই বৈধ কারণ থাকার পর স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। যদি কখনো স্বামী স্ত্রীর মাঝে অমিল দেখা দেয়, এবং একজন অপরজনের হক আদায় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় তখন শরিয়াত তালাক সমাধানের জন্য দুটি ব্যবস্থান নিয়েছে। ব্যবস্থা অবলম্বন এর পূর্বে তালাক দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় নাই আল্লাহ না করুক যদি উক্ত দু'টি ব্যবস্থা দাড়াও সমস্যার সমাধান না হয় তখন তালাক দেওয়ার নিয়ম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

  • স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে তালাকের নোটিশ স্ত্রী এলাকার কর্পোরেশন মেয়র/ পৌরসভার মেয়র/ ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান পাঠাতে হবে। 
  • সংশ্লিষ্ট মেয়র/চেয়ারম্যান তালাক নোটিশ টি গ্রহণ করার ৯০দিনের পর তালাক কার্যকর হবে।

স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেওয়ার নিয়ম

স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নিয়ম এর ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।যদি স্বামী স্ত্রীর মাঝে সম্পর্কের ফাটল ধরে এবং সমঝোতার সমস্ত প্রচেষ্টা করতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যায়ে তারা যদি স্বেচ্ছায় বিবাহবিচ্ছেদ করতে প্রস্তুত হয় এই অবস্থায় শরীয়তের বিধান অনুযায়ী স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেওয়া নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে। স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেওয়ার নিয়ম-৩টি। যথাঃ

  • কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে যদি স্ত্রীকে নিয়ে ক্ষমতা দেওয়া থাকে সে তার স্বামীকে তালাক দিতে পারবে সেই ক্ষেত্রে কাবিননামা ১৮ নম্বর কলামের ক্ষমতাবলে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারে।
  • দ্বিতীয় টি হল কাবিননামার .১৮ নম্বর কলামে স্ত্রীকে যদি ক্ষমতা না দেওয়া হয়। তাহলে খোলা তালাক বা স্ত্রী  স্বামীকে তালাক দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করতে পারেন ।
  • তৃতীয়টি হলো স্ত্রী কোর্টে গিয়ে তালাকের জন্য মামলা পারবেন।

কোর্টের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার নিয়ম

কোর্টের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার নিয়ম এর ক্ষেত্রে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার জন্য তালাকের নোটিশ স্ত্রী এলাকার কর্পোরেশন মেয়র/ পৌরসভার মেয়র/ ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান পাঠাতে হবে। এবং কপি স্টিলের বর্তমান ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট মেয়র/চেয়ারম্যান তালাক নোটিশ এর প্রেক্ষিতে ৩০ দিনের মধ্যে সালিশ কমিটি গঠন করবে। সেই সালিশ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সংশ্লিষ্ট মেয়র/চেয়ারম্যান তালাক নোটিশ টি গ্রহণ করার ৯০ দিনের পর তালাক কার্যকর হবে।

বিদেশ থেকে তালাক দেওয়ার নিয়ম

অনেক ক্ষেত্রে এমন হয় যে আপনি বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন এবং এই মুহূর্তে আপনি আপনার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে তালাক নিয়ম হলোঃ

  • বিদেশ থেকে তালাক দেয়ার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম আপনাকে একজন এবং অভিজ্ঞ আইনজীবি সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
  • একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করার পর দ্বিতীয় ধাপটি হলো যেহেতু আপনি বিদেশে রয়েছেন। তাই দেশে আপনার এমন একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি কে নিযুক্ত করতে হবে। যে আপনার অবর্তমানে আইনজীবী হতে প্রাপ্ত তালাক নোটিশে স্বাক্ষর করবে
  • তৃতীয় কাজটি হলো আপনার আইনজীবী হতে তালাক নোটিশ টি আপনি যেই দেশে অবস্থান করছেন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সেই দেশে পাঠিয়ে দিতে হবে। একজন আইনজীবীর জন্য খুবই সহজ বিষয়।
  • চতুর্থ কাজটি হলো আইনজীবী হতে প্রাপ্ত সকল কাগজপত্র আপনার স্বাক্ষর করতে হবে। সেই সকল কাগজপত্র আপনার রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে নিয়ে যে সত্যায়িত করতে হবে এবং সেইগুলো আপনার স্ত্রীর বর্তমান ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে হবে। এবার সেখানকার মেয়র/চেয়ারম্যান সেটি গ্রহণ করার পর ৯০ দিনের মধ্যে কার্যকর হয়ে যাবে।

তালাকের কতদিন পর বিয়ে করা যায়? তালাক দেওয়ার নিয়ম

অনেকের ক্ষেত্রে ভুল ধারণা রয়েছে যে তালাক নোটিশ সাথে সাথে নতুন বিবাহ আবদ্ধ হয়। কিন্তু এই ধারণা এবং ভুল পদক্ষেপ। এরপর বিবাহ করার ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ে নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। মেয়ের ক্ষেত্রে তালাকের নোটিশ পাওয়ার পর থেকে শুরু করে তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পর বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। পুরুষের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম এর নোটিশ দেওয়া শুরু করে তিন মাস পর নতুন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।

তিন তালাকের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিধান কী? তালাক দেওয়ার নিয়ম

অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় স্ত্রীকে আবার কিছুদিন পর সেই স্বামী-স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে চাই। অথচ ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী তৃতীয় তালাকের পর স্ত্রী নিষিদ্ধ হয়ে যায়। কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয় সেই ক্ষেত্রে সে স্ত্রী কে ফিরিয়ে নিতে চাইলে, সেই স্ত্রীকে অন্য কোন পরুষ বিয়ে করতে হবে।

সেই পুরুষ হতে যদি স্ত্রীর আবার তালাক হয় এবং সেই স্ত্রী এবং স্বামী উভয়ে মনে করে যে তারা আল্লাহর বিধান পালন করতে পারবে। সেই ক্ষেত্রে আবার পুনরায় আগের স্ত্রীকে সে ফিরিয়ে নিতে পারবে।

মেয়েরা কি স্বামীকে তালাক দিতে পারে? তালাক দেওয়া নিয়ম

যদি ন্যায় সঙ্গত কারন দেখাতে পারে তাহলে কেবল মাত্র স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারে। মেয়েরা বৈধ কি কারনে স্বামীকে তালাক দিতে পারবে। 

  • কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে দীর্ঘদিন তার দাম্পত্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখে। অর্থাৎ তাকে রেখে বিদেশে কোন কোন স্থানে তার জীবন কাটিয়ে দেয়। স্বামী তার অর্থ পরকীয়ায় ব্যয় করে।
  • দ্বিতীয় কারনটি হলো তার স্বামী তা জৈবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ বা যৌন দুর্বলতার কারণে তাদের মাঝে মিল-মহব্বত না হলে স্ত্রী তালাক চাইতে পারে।

স্ত্রী যদি সংসার করতে না চায়?  তালাক দেওয়ার নিয়ম

আগে শোনা যেত শুধুমাত্র পুরুষরাই স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান পেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিছে। সেই ক্ষেত্রে শান্তির ধর্ম ইসলামের বিধান রয়েছে তা হলো তালাক দেওয়ার নিয়ম। তাই যদি কোন স্ত্রী সংসার করতে না চাই। তবে জোর করে সংসার না করানো উত্তম। এই ক্ষেত্রে সন্তান সন্তানাদির এর কথা চিন্তা করে যদি সে থাকতে চাই ভালো না থাকতে চাইলে তাকে তালাক দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

স্ত্রী যদি আলাদা থাকতে চাই?  তালাক দেওয়ার নিয়ম

ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী একজন বিবাহিতা নারী স্বামীর অনুমতি ব্যতীত আলাদা থাকতে পারবেনা।এমনকি স্বামীর অনুমতি ব্যতীত নফল রোজা বা অতিরিক্ত নফল নামাজ পড়ার হুকুম ইসলাম দেয় না।সেই ক্ষেত্রে কোন স্ত্রী যদি স্বামীর থেকে আলাদা থাকতে চাই। তাহলে তাকে তালাক কে হবে নতুবা সে আলাদা থাকতে পারবেনা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url