চুল পড়া রোধে ঘরোয়া কিছু টিপস | | ঘরোয়া বাইরে কিছু টিপস এন্ড টিক্স
দিন দিন চুল পড়ে যাচ্ছে করণীয় কি জানতে চেয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন এই ভিডিওতে চুল ঘন ও মজবুত করতে সাহায্য করে এমন দশটা খাবারের কথা বলব তারপর বলব কোন তেল আর ভিটামিন ট্যাবলেট নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে চুলের যত্ন নেয়ার সঠিক উপায় ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে পরামর্শ খাবারের কথা বলব।
টক জাতীয় ফল
আমাদের দেশে বিভিন্ন ঋতুতে বাহারি ফল হয়। এসব স্থানীয় ফল বিদেশী ফলের মতোই সুস্বাদু। শুধু স্বাদ ও ঘ্রাণেই নয়, পুষ্টিগুণের দিক থেকেও চমৎকার। আজকাল এদের নাম শুনলেই বেশ কিছু দেশি ফল চোখে পড়ে। আপেল, আঙ্গুর এবং মাল্টার মতো বিখ্যাত, দামি বিদেশী ফল শিশুদের আধুনিকতার ছোঁয়ায় খাওয়ান। তবে স্থানীয় ফলের পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। বিদেশী ফল আপেলের প্রতি ১০০ গ্রাম ভিটামিন সি মাত্র ৩.৫ মিলিগ্রাম ডায়েটে উপস্থিত থাকে। পেয়ারা, বাংলা আপেল নামেও পরিচিত, ২১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি সরবরাহ করে। আপেলের তুলনায় পেয়ারায় ৫০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। আঙ্গুরের পুষ্টির মান ১০৪ কিলোক্যালরি, যা আঙুরের চেয়ে ৬ গুণ বেশি, যার পুষ্টির মান ১৭ কিলোক্যালরি। শসাতে আঙ্গুরের (২৮.৫ মিলিগ্রাম) তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ভিটামিন সি (৫১ মিলিগ্রাম) রয়েছে, যা প্রায় সমান পরিমাণে। পাকা আমে ৮৩০০ মাইক্রোগ্রাম, পেঁপে ৮১০০ মাইক্রোগ্রাম এবং কাঁঠালে ৪৭০০ মাইক্রোগ্রাম (ফল পরিচিতি ও চাষের কৌশল, কৃতসা) রয়েছে। বিপরীতে, আঙ্গুর, আপেল, নাশপাতি এবং কারেন্টের মতো ফলগুলিতে কোনও ক্যারোটিন নেই। দেশি কমলাতে ৩৬২ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন থাকে।
টক দই
টক স্বাদের দই শরীরের চর্বি পুড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। সবচেয়ে বেশি সময় হজম হয় টক দই নিজেই। সুতরাং, উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবারের চেয়ে টক দই বেছে নেওয়া আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ বোধ করতে এবং অতিরিক্ত খাওয়া বন্ধ করতে সহায়তা করবে।
ছোলা
ছোলাতে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং লিপিড ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন এবং খনিজ লবণ রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলাতে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১০ মিলিগ্রাম আয়রন এবং ১৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন এ থাকে। এ ছাড়াও রয়েছে ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি-১ ও বি-২। শরীর সব কিছু থেকে উপকৃত হতে পারে।
ডাল
ডাল প্রধানত বিউলি, মুগ, মসুর, ছোলা, মটর, অড়হর, মাষকলাই, খেসারি প্রভৃতি শুঁটিজাতীয় মৌসুমি ফসলের শুকনো বীজ। সব রকমের ডাল মানুষের জন্য অন্ত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী। ডাল প্রোটিন প্রধান খাদ্য। এতে প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ এবং অত্যধিক লাইসিন থাকায় ও দামে সস্তা হওয়ায় ডালকে প্রায়শই গরিবের আমিষ বলা হয়।
পালংশাক
পালং শাকে ভিটামিন, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, পিগমেন্ট এবং মিনারেল সহ সবকিছুই রয়েছে। সুতরাং, পালং শাক হল এক প্রকার "সুপার ফুড"। ত্বকের প্রতিরক্ষা ত্বককে ক্ষতিকারক UV বিকিরণ থেকে রক্ষা করা হয় এবং অসংখ্য ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট এবং রঙ্গকের উপস্থিতির কারণে ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।ভিটামিন এ, যা চোখের ভিতরের এবং বাইরের উভয় স্তরকে খাওয়ায়, পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। প্রাথমিক অন্ধত্ব থেকে রক্ষা করে। এতে আয়রনও রয়েছে প্রচুর। এই সবজিটি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এমনকি অনাগত শিশুর সেরিব্রাল বিকাশের জন্য, পালং শাক অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে পালং শাকে বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন এবং জ্যান্থাইন রয়েছে।
পালং শাক খেলে ভিটামিন এ-এর অভাব দূর হয়। পালং শাক চোখের আলসার নিরাময়ে এবং চোখের শুষ্কতা দূর করতে চমৎকার। ব্যবহার করে চোখের ফোলাভাব কমায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পালং শাক অত্যন্ত কার্যকরী রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকারী। পালং শাকে সোডিয়ামের পরিমাণ খুবই কম এবং পটাশিয়াম বেশি। এছাড়াও, এতে থাকা ফোলেট রক্তচাপ কমায় এবং রক্তনালীকে শিথিল করে। পালং শাকে উপস্থিতিতে টোকোফেরল, ফোলেট এবং ক্লোরোফিলিন ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং চিকিত্সা উভয় ক্ষেত্রেই বিশেষভাবে কার্যকর। প্রমাণিত হয়েছে যে পালং শাক মূত্রাশয়, প্রোস্টেট, লিভার এবং ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং চিকিত্সা করতে সহায়তা করতে পারে। ত্বকের সুরক্ষা জন্যে বিভিন্ন ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট এবং রঙ্গক ক্ষতিকারক UV বিকিরণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং ত্বকের ক্যান্সারের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবেও কাজ করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযোগি পালং শাকের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি আলফা লাইপোইক অ্যাসিড রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় এবং ইনসুলিনের প্রতি শরীরের সংবেদনশীলতা উন্নত করে। অ্যাজমা প্রতিরোধ করে- পালং শাকের কিছু উপাদান হাঁপানি প্রতিরোধে সহায়ক। এর মধ্যে বিটা ক্যারোটিন অন্যতম। কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম - পালং শাক পানি ও ফাইবারে পরিপূর্ণ। তাই পালং শাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। পালং শাকে রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন কে, যা হাড় তৈরি করতে সাহায্য করে। শক্তিশালী হাড় তৈরি করতে ভিটামিন কে লাগে। পর্যাপ্ত ভিটামিন কে গ্রহণ ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ কমায়। পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন B1, B2, B3 এবং B6 রয়েছে। এগুলি কেবল চুল পড়া বন্ধ করে না তা কিন্তু নয়, ত্বককে আরও উজ্জ্বল করে তোলে। পালং শাকে ফ্ল্যাভোনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। মানসিক তত্পরতা বজায় রাখে। দীর্ঘ সময়ের জন্য মস্তিষ্কের ক্ষমতা সংরক্ষণ করে, মস্তিষ্কের বার্ধক্যকে ধীর করে দেয় এবং স্নায়ুতন্ত্রকে পরবর্তী যুগে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। এই সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০ গ্রাম পালং শাক খেলে ঝুঁকি কম হয়।
ডিম
সুন্দর চুলের জন্য আপনার জন্য খুবই ভালো বন্ধু হতে পারে। ডিম কেমন ভালো হতে পারে বুঝিয়ে বলছি। আমাদের চুল শর্করা ও ফ্যাটের তৈরি না চুল পুরাটায় প্রোটিনের তৈরি। আর আমরা গবেষণা থেকে নিশ্চিত জানি যে খাবারের প্রোটিনের অভাব হলে চুল পড়ে বা ঝরে যায়। কিন্তু আমাদের অনেকের খাবারের যথেষ্ট পরিমাণ প্রোটিন থাকে না কারণ আমরা ভাতটাই বেশি খায়। চুল সুন্দর ও ঝলমলের রাখার জন্যে খাবার তালিকায় ডিম রাখা অত্যন্ত জরুরী। ডিমে চুলকে ঘনকালো আর সুন্দর রাখতে সহায়তা প্রদান করে। ডিমে অ্যানার্জি থাকে ১৪৩ ক্যালোরি। আর কার্বোহাইড্রেট থাকে ০.৭২ গ্রাম মতো। প্রোটিন থাকে ১২.৫৬ গ্রাম, ফ্যাট থাকে ৯.৫১ গ্রাম। এছাড়া ফসফরাস থাকে ১৯৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৩৮ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক থাকে ১.২৯ মিলিগ্রাম।
তৈলাক্ত জাতীয় মাছ
বাতজনিত রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্যামনের মতো তৈলাক্ত মাছগুলো বাতজনিত রোধ করতে সাহায্য করে। শুধু স্যামন নয়, সামুদ্রিক মাছ সার্ডিন, টুনা ও মিঠাপানির মাছও বাতজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। কারণ যেকোনো তৈলাক্ত মাছেই ওমেগা-৩-এর পরিমাণ বেশি থাকে। তবে আমাদের দেশীয় মাছে রয়েছে ইলিশ, কই, চাপিলা এই মাছগুলোতে ওমেগা সিক্স ফ্যাক্ট রয়েছে। এসব মাছে ফ্যাটি অ্যাসিড ছাড়াও ভিটামিন ডি থাকে। প্রচলিত আমাদের মাঝে একটা ধারণা রয়েছে ওমগো-৩ পূরণের জন্যে সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে
হলুদ সবজি ও ফলমূল
হলুদ ও কমলা ফল যেমন- কমলা, মালটা, হলুদ আপেল, কলা, লেবু, জাম্বুরা, পাকা আম, পিচ, ফুট, কাঁঠাল, আনারস, পেঁপে, নাশপাতি ইত্যাদি। এগুলো ভিটামিন এ তে ভরপুর। চুলের গোড়া থেকে অর্থ্যাৎ চুল যে জায়গায় থেকে বড় হয় সেটা ঠিক মতো কাজ করার জন্যে দরকার হয় ভিটামিন এ। আর হলুদ ও কমলা সবজি হল মিষ্টি আলু, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি কর্ন, হলুদ মরিচ, হলুদ টমেটো, ভুট্টা, হলুদ ক্যাপসিকাম, হলুদ বিট ইত্যাদি। তাই দিনে যতটুকু ভিটামিন এ দরকার হয় আমাদের শরীরের তার আধাকাপ গাজরের পূরণ হয়ে যায়।
বাদাম ও বিভিন্ন ধরনের বীজ
বাদাম ও বীজ জাতীয় যেমন-কাঠ বাদাম, চিনা বাদাম, পেস্তা বাদাম, আখরোট, কুমড়োর বিচি,চিয়া সীড, সূর্যমুখীর বিচি, তিসির বিচি, তরমুজের বিচি, কাজু বাদাম,বলনান্ট। এগুলো রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাক্ট তাছাড়া এতে পাওয়া ওমেগা সিক্স ফ্যাক্ট যা চুলের গোড়া মজবুত ও লম্বা করতে সাহায্য করে। এই ওমেগা সিক্স ফ্যাক্ট আমাদের শরীর নিজে নিজে তৈরি করতে পারে না তাই আমাদেরকে খাবার থেকে নিতে হয়। এটার অভাবে আমাদের মাথার চুল পড়ে যায়, চুলের রং হালকা হয়ে যায় তাই প্রতিদিনের নাস্তার কিছু পরিমাণ বাদাম রাখতে পারেন। তবে বেশি পরিমাণ বাদাম খাবেন না তাহলে আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে। বাদামে রয়েছে ভিটামিন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং তাদের স্বাদও ভিন্ন।
চুল পড়া রোধে ঘরের বাইরে ফর্মূলা
- Pumpkin Hair Oil (কদুর তেল)
- ভিটামিন ডি
- কন্ডিশনার ও চুল শুকানো
- প্রতিবার চুল ধোয়া বা পরিস্কার করার পরে কন্ডিশনার লাগাতে হবে
- আলতো ভাবে গোসলের পরে চুল মুছতে হবে কখনো ঘষে ঘষে চুল মুছা উচিত নয়
- ভেজা চুল কখনো আঁচড়াবেন না একটু চুল শুকালে পরে চুল আঁচড়ানো উচিত হবে তবে চিরনি মোটা দাঁতের গুলো আরও ভালো
- চুল শুকানোর মেশিন ব্যবহার না করার ভালো
- শক্ত বা টাইট করে চুল বাঁধা যাবে না
চুল পড়ার চিকিৎসা
চুল পড়ার চিকিৎসার সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হল প্লেটলেট সমৃদ্ধ প্লাজমা থেরাপি টপিকাল মিনোক্সিডিল দ্রবণের সাথে মিলিত। যাইহোক, সবকিছু পেশাদার ডাক্তারের সুপারিশ অনুযায়ী করা আবশ্যক। নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া ব্যাকফায়ার হতে পারে। আবার, প্রতিটি রোগী প্রতিটি চিকিৎসায় সাড়া দিতে পারে না।
কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url