OrdinaryITPostAd

সংকট সংগ্রাম, দুর্যোগ দুর্বিপাকে অবিচল এক নারীর প্রতিকৃতি | | বঙ্গমাতা বেগম মুজিব | Bangmata Begum Mujib

আজ এমন একজন বিদুষী, আলোকিত নারীকে নিয়ে আমি কিছু লিখতে বসেছি যার কথা মনে হতেই চোখের সামনে ভেসে উঠেছে অপরূপ, স্নিগ্ধতা, মায়াভরা মুখ যেন চির চেনা, আদি এবং অকৃত্রিম বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি, তিনি আর কেউ নন সর্বকালের সবশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী ও জীবনসঙ্গী “শেখ ফাজলাতুন্নেসা মুজিব ।”

আমাদের জাতীয় কবি “কাজী নজরুল ইসলাম” যথার্থই বলছেন-

“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি

চির কল্যাণকর,

অর্ধেক তার, করিয়াছে নারী

অর্ধেক তার নর

কোনো কালে একা হয়নি ক'জয়ী পুরুষের তরবারী

প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয় লক্ষ্মী নারী।”

চারা গাছের মহীরূহ হয়ে বেড়ে ওঠার পেছনে যেমন থাকে কারো না কারোর নিরলস প্রচেষ্টা এবং অনন্য ত্যাগের মহিমা- তেমনি মহত সৃষ্টিশীল এবং গৌরবময় কাজে অনুপ্রেরণা ও সাহস যোগানোর পেছনেও থাকে একজন নারীর মহিমান্ধিত ত্যাগ ও ভূমিকা।যাঁর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ পেয়েছি, কোটি কোটি মানুষের যিনি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার একজন হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,তাঁর পেছনেও ছিল একজন ক্লান্তিহীন বিচক্ষণ দৃঢ় চিত্তের আধিকারী নারী তিনি আমাদের "বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুনেসা মুজিব” বঙ্গবন্ধুর চিরকালের আদর্শিক সঙ্গী, শুদ্ধতম বাঙালি নারীর প্রতীক।

পোস্টের সূচিপত্র

জন্ম পরিচয়

১৯৩০ সালের ৮ আগষ্ট মধুমতি নদীর শাখা বাইগার নদীর ঢেউ আর মুক্ত সজীব বাতাসের শান্ত পরিবেশের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ফুলের মত গায়ের রং ছিল বলে মা ডাকতেন “রেণু” বলে। রেণুর মায়ের নাম হোসেন আরা বেগম এবং বাবার নাম জহুরুল হক।

শিক্ষা জীবন

মাত্র ছয় বছর বয়সে ওয়াজেদ আলী খা ফজিলাতুন্নেসা রেণুকে “করটিয়ার প্রাইমারি” স্কুলে ভর্তি করে দেন। তিনি ১৯২১ সাল প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক ও ১৯২৩ সালে প্রথম বিভাগে ইডেন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ফজিলাতুনেসা ১৯২৫ সালে কলকাতার বেখুন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে বিএ পাস করেন।

বৈবাহিক অবস্থা

শেখ ফাজিলাতুনেসা মুজিব ছিলেন জ্ঞানী, বুদ্ধিদীপ্ত, দায়িত্ববান ও ধৈর্যশীল এককথায় অসামান্য একজন মানুষ মহীয়সী নারী। তিনি তিন বছর বয়সে বাবাকে এবং পাঁচ বছর বয়সে মাকে হারান শেখ ফজিলাতুন্নেসা রেণু। দাদা ছাড়া তখন তার কেউ ছিলেন না। দাদাও মারা যান তার দুই বছর পর। তারপর বঙ্গবন্ধুর মায়ের কাছে চলে আসেন রেণু। বঙ্গবন্ধুর ভাইবোনদের সাথেই তিন বড় হন। ১৯৩৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ও ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধুর বয়স ছিল ১৯ বছর এবং রেণুর বয়স ৯ বছর। তাদের সংসার আলো করে একে একে জন্ম নেন শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা ও শেখ রাসেল।

সংকট- সংগ্রামে নিভীক সহযাত্রী বঙ্গমাতা

এদেশের মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে বেগম মুজিব যে কর্তব্যনিষ্ঠা, দেশপ্রেম, দূরদশী চিন্তা, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তার ফলে জাতির পিতার পাশাপাশি তিনি আজ “বঙ্গমাতার” আসনে অধিষ্ঠিত। এদেশের রাজনীতিতে তার অনন্য সাধারণ ভূমিকার জন্য চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বঙ্গমাতার দূরদর্শিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ খুলে দিয়েছিল। 

কন্যা “শেখ হাসিনার” উদ্ধতি

“পাকিস্তান সরকার আম্মাকে ভয় দেখায়, বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তিনা নিলে তিনি বিধবা হবেন। মা সোজা বলে দিলেন, কোন প্যারোলে মুক্তি হবেনা । আমি মায়ের সিদ্ধান্তের কথা বঙ্গবন্ধুকে যখন জানালাম তখন অনেক আওয়ামীলীগ নেতাকেও দেখেছি আমাকে বলতে, তুমি কেমন মেয়ে? বাবার মুক্তি চাওনা? আম্মাকে বলেছে, ভাবী আপনি কিন্তু বিধবা হবেন”

লেখক “সৈয়দ বদরুল আহসান”

“ From Rebel to Founding Father Sheikh Mukibur Rahman" গ্রন্থে উল্লেখ করেন “She passed on the message to Mujib listened to his wife. He did not give any thought to freedom on Parole anymore." বঙ্গবন্ধু যদি প্যারোলে যেতেন বাংলাদেশ স্বাধীন হতোনা। “বঙ্গমাতার” বিচক্ষণতা স্বাধীনতা সংখামের ইতিহাসে ধুবতারার মত।

বঙ্গমাতা প্রতিটা নারীর অনুপ্রেরণা

একদিকে বঙ্গমাতা যেমন প্রতিটা নারীর অনুপ্রেরণা তেমনি অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর জীবনে বঙ্গমাতার প্রভাব অপরিসীম । বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুকে শক্তি, সাহস, মনোবল, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন বলে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু 'জাতির পিতা' হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু জীবনে যত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছেন সবটাতেই বঙ্গমাতা তাঁকে ছায়ার মত সাহায্য করেছেন। “ডঃ নীলিমা ইব্রাহিম” বলেন- “রেণু ছিলেন নেতা মুজিবের Friend Philosopher and Guide” শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ আপসহীন লড়ায়-সংগ্রামের ধারাবাহিকত ধীরে ধীরে শুধুমাত্র বাঙালি জাতির পিতাই হননি, বিশ্ব বরেণ্য, রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছিলেন। এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তার সহধর্মিণী, মহিয়সী নারী “বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব” শুধু তা-ই নয়, রাজনীতির নানা দুঃসময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছিলেন গঠনমুলক পরামর্শ। তার বলিষ্ঠ ও সময়োপযোগী পরামর্শসমূহ জাতির জীবনে সুফল বয়ে এনেছে , যা জাতীয় ইতিহাসে স্থার্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী হিসেবে দীর্ঘকাল তার পাশে থেকে মানব কল্যাণ ও রাজনীতির যে শিক্ষা তিনি লাভ করেছেন, তাতে তিনি একজন বিদুষী ও প্রজ্ঞাবাননারীতে রূপান্তরিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সমথ রাজনৈতিক জীবনে । ছায়ার মতো অনুসরণ করে তার প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অফুরান প্রেরণার উৎস হয়েছিলেন “বেগম মুজিব” বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয়-দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানি শাসকদের হাতে বন্দি ছিলেন, তখন দলের সর্বস্তরের নেতার্কমীরা বঙ্গমাতার কাছে ছুটে আসতেন। তিনি তাদেরকে বঙ্গবন্ধুর

বিভিন্ন দিক - নির্দেশনা বুঝিয়ে দিতেন এবং লড়াই - সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা যোগাতেন। 

নিভৃতে উৎসর্গিত মহাজীবন বঙ্গমাতা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী, বাঙালিব লড়াই সংগ্রাম-আন্দোলনের নেপথ্যের প্রেরণাদাত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি। সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থেকেও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎস ছিলেন শেখ মুজিব । জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি জাতির পিতার পাশে থেকে দেশ ও জাতির মঙ্গলাকাঙক্ষায় নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন। তার কর্মের মাধ্যমে তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন সংগামমুখর জীবনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যে জীবন কোটি কোটি জীবনের আশা- আকাঙ্খা স্বপ্নের সাথে দ্বিধাহীনভাবে যুক্ত হয়েছিল ত্যাগ ও নিপীড়ন মোকাবেলা করবার দৃপ্ত প্রতিজ্ঞায়। 

বঙ্গমাতার দেশ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ

পাকিস্তানি শাসকদের গভীর ষড়যন্ত্রের সেই দুন্সময়েও বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন “ফজিলাতুন্নেসা মুজিব” । ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের এতিহাসিক ভাষণের নেপথ্যেও ছিল ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের অনন্য অবদান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবার আগে তিন শেখ মুজিবকে বলেছিলেন কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে এবং তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিলেন “মনে রেখো তোমার সামনে আছে জনতা পেছনে বুলেট সুতরাং কারও তৈরী করা কথা নয়, তোমার মন যা চায়, তোমার মনে যে কথা আছে তুমি তাই বলবে ।”

কি অসাধারণ দৃঢ়চেতা প্রেরণাদাত্রী

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ সেদিন বঙ্গবন্ধু জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন । যার ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতার লাল সূর্যকে আমরা ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রেরণা দানের পাশাপাশি এ দেশের সুদীর্ঘ সংগ্রামের ফসল আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। বাংলার ইতিহাসে জাতির সংথামী নেতৃত্ব সৃষ্টিতে নীরবে নেপথ্যে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন "বঙ্গমাতা ।” বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা অবিচ্ছিন্ন সম্তা ছিলেন।

“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গ্রন্থে” মাযহারুল ইসলাম লিখেছেন

“আমি বঙ্গবন্ধুর অনাবিল সাক্ষাতকার লাভ করেছি। একবার তিনি বলেন, আমার জীবনে দুটো বৃহৎ অবলম্বন আছে - আমার আত্মবিশ্বাস, অপরটি - তিনি একটু থেমে আমাকে বলেন, অপরটি বলুন তো কি? হঠাৎ এ রকম প্রশ্নের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি একটু মৃদু হেসে বললেন অপরটি আমার স্ত্রী, আমার আকৈশোর গৃহিণী ।”

বঙ্গমাতা সবসময় বাঙ্গালী জাতীর হৃদয়ে থাকবেন এবং তার ত্যাগ, স্বদেশপ্রেম এবং জনগনের প্রতি ভালোবাসার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

ফজিলাতুন্নেসা থেকে বঙ্গমাতা

শেখ ফজিলাতুন্নেসা ছিলেন উদার মনের মানুষ, গরিব অসহায় মানুষের জন্য তার মন কাঁদতো।ফজিলাতুনেসা মেয়েদের সেলাই কাজ শেখাতেন, তিনি কন্যা দায়গ্স্থ পিতা বা লেখাপড়ায় অসমর্থ ছেলে-মেয়েদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করতেন। জনগণের প্রতি তার মাতৃসুলত ভালোবাসা ও গ্লেহ এবং বিভিন্ন এতিহাসিক আন্দোলনে তাঁর আত্মত্যাগ বিশেষ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার আত্মত্যাগের জন্য তাকে বঙ্গমাতা" বলা হয়। এদেশের মানুষের আন্দোলন- সংথামে বেগম মুজিব যে কর্তব্যনিষ্ঠা, দেশপ্রেম, দূরদর্শী চিন্তা, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তার ফলে জাতির পিতার পাশাপাশি তিনি আজ 'বঙ্গমাতার' আসনে অধিষ্ঠিত। এদেশের রাজনীতিতে তার অনন্য সাধারণ ভূমিকার জন্য চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ।

রত্নগর্ভা মা, যোগ্য সহধর্মিনী, সংগ্রামী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব 

বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিজেকে এবং নিজের সন্তানদের গড়ে তোলেন। শুধুমাত্র সহধর্মিণী হিসেবে নয়, রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে আজীবন বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী ছিলেন বেগম মুজিব। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ইতিহাসের কালজয়ী মহানায়কের অনুপ্রেরণাদায়িনী হয়ে পাশে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ যেন একই সূত্রে গাথা, তেমনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফাজিলাতুন্নেসা মুজিবও পরস্পর অবিচ্ছেদ্য নাম। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো আলোচনা হলেই স্বাভাবিকভাবে সেখানে বঙ্গমাতার প্রসঙ্গ চলে আসে । বেগম মুজিব সম্পর্কে সাক্ষাৎ কারে বঙ্গবন্ধু বলেছেন- “আমার স্ত্রীর মতো সাহসী মেয়ে খুবই কম দেখা যায়।” আমাকে যখন পুলিশ এসে জেলে নিয়ে যায়, আমার উপর নানা অত্যাচার করে, আমি কবে ছাড়া পাব বা কবে ফিরে আসব ঠিক থাকে না, তখন কিন্তু সে কখনো ভেঙে পড়েনি ।

বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিচারণ 

মায়ের স্মৃতিচারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন “পৃথিবীতে যা কিছু অর্জন হয়, তার পেছনে প্রেরণা দেয়ার কেউ না কেউ থাকেন। তা না হলে কখনো কোনো নেতাই সফলকাম হতে পারে না। ঠিক তেমনি আমার বাবার রাজনীতির পেছনে আমার মায়ের বিশাল অবদান রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে আমার মা দৃ়চেতা ছিলেন।” তিনি আরো বলেন, “ আমার মা ছিলেন গেরিলা । বাবা কারাগারে থাকা অবস্থায় গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাবার নির্দেশনায় নেতাকর্মীদের কাছে খবর পৌছে দিতেন। যা কোনদিন ইন্টিলিজেন্মের লোকেরা জানতে পারেনি। তার মানে আমার মা ছিলেন আসল গেরিলা।”

শেখ ফাজিলাতুন্রেসা মুজিব, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের আলোকবার্তিতা

রেণু আমার পাশে না থাকলে এবং আমার সব দুরঃখকষ্ট, অভাব-অনটন বারবার কারাবরণ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন হাসিমুখে মেনে নিতে না পারলে আমি আজ বঙ্গবন্ধু হতে পারতাম না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত থাকতে পারতাম না। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় সে আদালতে নিত্য হাজিরা দিয়েছে এবং শুধু আমাকে নয়, মামলায় অভিযুক্ত সবাইকে সাহসও প্রেরণা জুগিয়েছে। আমি জেলে থাকলে নেপথ্যে থেকে আওয়ামীলীগের হাল ধরেছে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুনেসা মুজিব (রেণু), বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের কতটা জায়গাজুড়ে তা এই কয়েকটি বাক্য পড়লেই স্পষ্ট হয়ে যায়। একথা সর্বজনবিদিত যে বঙ্গবন্ধুর কোনো পিছুটান ছিল না বলেই তিনি দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যেতে পেরেছিলেন। তার এই চলার পথে বাধা তো নয়-ই, বরং মসৃণ করেছিলেন স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফাজিলাতুনেসা। আর একারণে তিনি বাঙালির মনে সব সময় মহীয়সী নারী হয়ে থাকবেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন- “বঙ্গমাতা শেখ ফাজিলাতুন্নেসা মুজিব বাঙালির অহংকার, নারী সমাজের প্রেরণার উৎস। তিনি কেবল জাতির পিতার সহধর্মিণীই ছিলেন না, বাঙালির মুক্তিসংখামেও তিনি ছিলেন অন্যতম অগ্রদূত ।”

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন - “মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুনেসা মুজিব ছিলেন বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন যোগ্য ও বিশ্বস্ত সহচর এবং বাঙলির মুক্তিসংখামের সহযোদ্ধা। তিনি অসাধারণ বুদ্ধি, সাহস, মনোবল, সর্বংসহা ও দুরদর্শিতার আধিকারী ছিলেন এবং আমৃত্যু দেশ ও জাতি গঠনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।” 

অবেলায় বিদায় (মৃত্যু) 

এই মহীয়সী নারী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সপরিবারে খুনিচক্রের বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। সেদিন তার তিন পুত্র, দুই পুত্রবধূ এবং তার ঘনিষ্ঠ আত্রীয়স্বজন সহ অনেককেই নৃশংসভাবে হত্যা করে।

শেষকথাঃ বেগম মুজিব এক মহীয়সী নারীর প্রতিকৃতি বিশেষ প্রতিনিধি, বঙ্গমাতা ফজিলাতুনেসা রেণু জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর পাশে ছায়ার মত থেকেছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর কারাগারে থাকা কালীন বঙ্গমাতা তাকে ডায়েরি দিয়েছেন যাতে তিনি তার কারাচারের বিভিন্ন স্মৃতি লিখেছেন যা পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা বইগুলো আমরা পেয়েছি। উপসংহারের উপকূলে দীড়িতে তাই বলতে হয়-

“বঙ্গমাতাকে ছাড়া বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসম্পূর্ণ,

বঙ্গমাতাকে পাশে পেয়েই বঙ্গবন্ধু পূর্ণতা পেয়েছেন।”


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url