OrdinaryITPostAd

মূ'তাহ যুদ্ধ | Battle of Mutah

মুতাহের যুদ্ধে, মাত্র ৩,০০০ সৈন্যের ছোট মুসলিম বাহিনী মুতাহ মরুভূমিতে (বর্তমান-জর্ডান) বিশাল রোমান সেনাবাহিনীকে নিযুক্ত করেছিল। কিংবদন্তি অনুসারে, এটি ছিল মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জীবদ্দশায় মুসলমানদের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধেগুলো মধ্যে অন্যতম।খ্রিস্টান জাতিগুলি এই সংঘাতে বিজয়ের রাস্তা তৈরি করেছিল। মক্কার অধিবাসীরা নবী মুহাম্মদকে আল-আমিন হিসাবে জানত, তিনি সমস্ত ধর্মপ্রাণদের দ্বারা আরাধ্য এবং বিশ্বস্ত ছিলেন। বিপত্তি বাধে যখন ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম এটা প্রচার শুরু করলে আরব কুরাইশ কিছু লোক তার উপর এতটাই ক্ষিপ্ত হয়েছিল যে তারা তাকে (হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে তার নিজ দেশ মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য করেছিল।

মদীনার অধিকাংশ ইহুদি উপজাতি বা গোত্র ছাড়া অধিকাংশ গোত্র মদিনাবাসিরাই নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আমন্ত্রণ গ্রহণ করে এবং সেখানে আসার পর তারা সবাই ইসলামী ধর্ম গ্রহণ করে। মদিনা এবং আশেপাশের অঞ্চলে দ্রুত ধর্মীয় সরকারী কাঠামো তৈরি হয়েছিল এবং ইসলামের দাওয়াতকে এত দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। ইসলাম ধর্ম শান্তি ও বরকতময়। তবে ইসলামের দাওয়াত পৌছাতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। আর এইধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য কখনও কখনও শেষ অবলম্বন হিসাবে যুদ্ধ অবলম্বন করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। ফলস্বরূপ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল যুদ্ধের দায়িত্বে ছিলেন এবং মাঝে মাঝে নিজেও যুদ্ধ করতেন। মুতার যুদ্ধে সাহাবীগণ অংশগ্রহণ করেছিল কিন্তুমুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অংশগ্রহণকরেননি।

তবে তিনজন সেনাপতি বা জেনারেলকে বেছে নেওয়া হয়েছিল এবং তাদের প্রত্যেকেই সংঘর্ষে শহীদ হয়েছিলেন। অবশেষে সেই দায়িত্ব এসে পড়ে খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহারের আশ্চর্যজনক সাহসিকতা এবং চতুর সহায়তায় তিনি সেদিন নির্দিষ্ট পরাজয় থেকে মুসলিম বাহিনী রক্ষা পেয়েছিলেন। যেকোনো ধরনের অভিযান বা প্রতিরোধ ক্ষেত্রে আরবের কয়েকটি গোত্র ছিল, তাদের দায়িত্ব ছিল সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া ও শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধসহ, কুরাইশদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

৫৯২ সালের দিকে খালিদ বিন ওয়ালিদ মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ওয়ালিদ ইবনে মুগীরা ছিলেন কুরাইশ বংশের বনু মাখজুম পরিবারের একজন শায়খ। মক্কায় ওয়ালিদের নাম ছিল আল-ওয়াহিদ বা "একজন"। মায়মুনা বিনতে আল-কাজিন হারিথের লুবাবা আল-সুগরা বিনতে আল-হারিস ছিলেন খালিদের মা।কুরাইশ ঐতিহ্য অনুসারে, জন্মের পরপরই খালিদকে মরুভূমির বেদুইনদের হাতে দেওয়া হয়। এখানে, মরুভূমির শুষ্ক, তাজা বাতাসে, তিনি পালক মায়ের দ্বারা লালনপালন করেছিলেন। পাঁচ-ছয় বছর বয়সে তিনি মক্কায় পিতা-মাতার কাছে ফিরে যান। ছোটবেলায় তিনি গুটিবসন্তের শিকার হন। তার জীবন রক্ষা করা হয়েছিল, তবে তার মুখে বসন্তের চিহ্ন রেখে গেছে।

এই সময়ে মক্কায় প্রভাবশালী গোত্রগুলো ছিল বনু হাশিম, বনু আবদ-দার এবং কুরাইশদের শাখা বনু মাখজুম। যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়গুলো বনু মাখজুমের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তারা ছিল আরবের শীর্ষ রাইডারদের একজন। খালিদ ঘোড়ায় চড়া, জ্যাভলিন নিক্ষেপ, তীরন্দাজ এবং তলোয়ার খেলায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। তিনি অস্ত্র হিসেবে বর্শাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি অল্প বয়সেই একজন যোদ্ধা ও কুস্তিগীর হিসেবে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। আগের জীবনে, খালিদ ছিলেন দ্বিতীয় খলিফা উমরের মামা।

খালিদকে ছিলেন মক্কার ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান সেই কারণে কখনো খালিদকে রুটি রুচি ব্যাপারে ভাবতে বা চিন্তা করতে হয়নি। খালিদের ধ্যান-জ্ঞান দিয়ে চালিয়ে যান কঠোর প্রশিক্ষণ আর এত কঠোর পরিশ্রমের ফলে ফলাফল পেতে খুব বেশিদিন সময় লাগেনি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরববাসীর মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল তার বীরত্ব ও শৌর্য-বীর্যের কথা।

কুরাইশ গোত্র মক্কা ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে দীর্ঘকাল শাসন করেছিল। নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন অন্যান্য গোত্রকে ইসলাম সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন, তখন তারা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিরোধিতা করেনি। যাইহোক, তাদের হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া সবাই তা করেছে। যখন তিনি এই অবস্থানে পৌঁছেছিলেন, তখন তিনি মদীনায় চলে যেতে বাধ্য হন। ইসলাম সর্বপ্রথম খোলাখুলিভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহ তাঁকে শান্তি দান করুন।

কিছু দিন পর, এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে মদীনার বছরের শেষের আশেপাশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। মুসলমানদের সংখ্যা দীর্ঘকাল ধরে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। এমনকি মক্কাবাসীরা ইসলাম গ্রহণের জন্য দলে দলে মদীনায় গমন করেছিল। মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে অমুসলিম কুরাইশরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে এবং ইসলামের প্রসার বন্ধ করার জন্য যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইসলামের সৈন্যরা শেষ পর্যন্ত মক্কা জয় করার আগে, তারা বেশ কয়েকটি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল।

মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওমরা পালনের জন্য মনস্থির করলেন ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে। চৌদ্দশ জন সাহাবী ও কোরবানির পশু নিয়ে কাফেলা প্রস্তুত হওয়ার সাথে সাথে মক্কার দিকে রওয়ানা হয়। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাফেলাকে থামানোর জন্য তিনশত জনের দল পাঠিয়েছিল।মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাফেলা আগমন খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মক্কায় এতে কুরাইশরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাফেলা প্রতিরোধের ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এই দলের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অন্য পথ খুঁজে বের করেছিল, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের সাথে যুদ্ধে না জড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু খালিদের ধূর্ততার কারণে তা অসম্ভব হয়েছিল। ফলাফল সেই বছর ওমরা পালন না করে মদিনা ফিরে যেতে হয়েছিল। তবে দুই পক্ষের সমঝোতায় স্বাক্ষরিত হওয়ার পরের বছর শান্তিপূর্ণভাবে ওমরা পালন করতে পেরেছিলেন।

তখন খালিদের মনে একটা সম্পূর্ণ নতুন আইডিয়া আসে। যখন তিনি ছোট ছিলেন, তখন তিনি আরবের সমস্ত ধর্মীয় ঐতিহ্যকে খুব একটা পছন্দ করতেন না। দীর্ঘকাল ধরে, নবী মুহাম্মদ ও তার প্রচারকৃত ধর্মের উপরে সবচেয়ে বেশি নজরে রেখেছিলেন। হুদায়বিয়া প্রান্তরে কোনোরকম যুদ্ধ ছাড়াই অসম কিছুই শর্ত মেনে মুসলিম বাহিনী মদিনায় ফেরত চলে আসে। এই ঘটনার পরে খালিদের মনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা আর বেড়ে যায়। অবশেষে খালিদ সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবেন। খালিদ আর দুইজন সহযোগি সহ মদিনায় পৌছে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে। হুদায়বিয়া সন্ধির ফলে মুসলমানেরা এর সুফল পেয়েছিল বেশি কারণ ১০ বছর যুদ্ধবিরতির ফলে ইসলাম প্রচার আরও সহজ হয়ে যায় রাসূল (সা.) জন্য। পত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের রাজা-বাদশা ও সম্মানির গোত্র প্রধানের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দেওয়ার কাছ চালিয়ে যান।

পত্রবাহক বা দূত নিয়ে মক্কা যাওয়ার পথে রোমান সম্রাটের প্রতিনিধি বিন আমর কর্তৃক আটক করে হাত-পা বেঁধে অমানসিক নির্যাতন করে হত্যা করে ফেলে। সেই সময়কারে সময়ে দূত হত্যা করা নিন্দনীয় অপরাধ বলে গণ্য করা হতো এবং এটি ছিল যুদ্ধ ঘোষণার শামিল এই খবর দ্রুত মদিনায় ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভের আগুনে ছড়িয়ে পড়ে ফলে অন্যায় করা নয় বরং অপরাধীকে শাস্তি দিতে বা এর জবাব দিতে অতি দ্রতার সহিতকমান্ডার-ইন-চিফ হিসাবে, তিন হাজার লোকের ইউনিফর্মে সজ্জিত হয়ে যায় অবশ্যই খালিদ সেই সময়কার সাধারণ সৈনিক হিসাবে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন।;রাদিয়াল্লাহু আনহু নিহত হলে, জাফর বিন আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং যদি এই তিনজনের কেউ বেঁচে না থাকেন, তবে সৈন্যরা তাদের মধ্য থেকে একজন সেনাপতি নির্বাচন করবে। রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াসের ১,০০,০০০ সৈনিক নিয়ে সাথে যোগদানের গুপ্তচর প্রতিবেদন বা খবর এসেছিল।

স্থানীয় খ্রিস্টান সৈনিক আর এক লাখ সৈন্য যুদ্ধের যোগদান করে , কি খবর নিয়মিত মুসলিম শিবিরের সৈন্যরা মধ্যে ভয়ের সঞ্চয় হয়েছিল। রাদিয়াল্লাহু আনহু আবেগঘন বক্তব্যে দেন এবং কাল বিলম্ব না করে যুদ্ধে যাওয়ার রওনা হয়ে গেলো।

মুতাহের মরুভূমিতে, যা আজ জর্ডানের অংশ, মুসলিম সেনাবাহিনীর সৈন্যরা নতুন শক্তির সাথে তৎকালীন সময়ে শক্তিশালী রোমান বাহিনীর সঙ্গে শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ, রোমান বাহিনীকে যুদ্ধে ব্যস্ত রাখা গেলেও মধ্যভাগ করা যায়নি। ফলাফল যাই হোক না ক্যানো প্রবল আক্রমণে করে বসে মুসলিম এর মধ্যে যুদ্ধে তিনজন সেনাবাহিনী নিহত হওয়ার ফলে মুসলিম বাহিনীর কিছুটা এলোমেলো হয়ে যায়। তিনজন জেনারেল কেউ পতাকা মাটিতে পড়তে দেয়নি। ফলে তিন সেনা কমান্ডো হারিয়ে নেতৃত্ব শূন্যে হয়ে পড়ে তবে নতুন সেনাপতি নির্ধারণ করতে খুব বেশি লাগেনি কারণ সেই যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন খালিদ। আর নতুন সেনাপতি খালিদের নেতৃত্বে প্রচন্ড আক্রমণ শুরু করেন তিনি জানতেন এই সময়ে আক্রমণে হবে আত্নরক্ষার অন্যতম উপায়। খালিদের নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনীর ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেয়নি। প্রথম দিনের মতো যুদ্ধ শেষে খালিদ বুঝতে পারলেন রোমান বিশাল বাহিনী বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে টিকে থাকা অনেক কঠিন হবে গতানুনিক পদ্ধতিতে যুদ্ধে করলে। পরদিন নতুন সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে নতুন উদ্যামে আবারে নতুন নয়াকৌশল নিয়ে মাঠে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে ।

রণকৌশল বদলে কারণে রোমান মনে করলেন মুসলিম বাহিনীর সৈন্য সহযোগিতা পেয়েছেন , ফলে তাদের ভিত্তরে ভয় কাজ করা শুরু করে দিয়েছে সেই ‍সুযোগে মুসলিম বাহিনী পরিকল্পিত আক্রমণে ফলে রোমান বাহিনী কোণঠাসা হয় পড়লে কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু সুযোগ বুঝে রোমান বাহিনীর কমান্ডা মালিকতে হত্যা করে ফেলে এতে রোমানরা কিছুটা ভীত  হয়ে পড়ে এবং পেছাতে থাকে তখন খালিদ যুদ্ধে বন্ধ না করে ধীরে ধীরে মুসলিম বাহিনীর পিছিয়ে বালুময় মরুভূমির দিকে পেছাতে থাকে । মরুভূমিতে যুদ্ধ করতে আসা মানে ছিল মরণ ফাঁদে পা দেয়া। রোমান সৈন্যরা বুঝতে পারে তাদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে ফলে তারাও পিছিয়ে যায় নিরাপদ স্থানে পৌছানোর পর থেকে মুসলিম বাহিনী প্রস্থান করে। মুসলিম বাহিনীতে ১২ জন যোদ্ধা শহীদ হয় তবে রোমানদের কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তা জানা যায়নি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url