OrdinaryITPostAd

ইসলামে বিবাহ | Islam and marriage

ইসলামে বিবাহ শব্দটি, আরবি যার অর্থ নিকাহ। প্রাপ্ত বয়স্ক নর-নারী মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক বা প্রণয়ন বিনিময়ে বৈধ সম্পর্কের মাধ্যমে আইনি চুক্তি বা সমাজ স্বীকারোক্তি দেয়। ইসলামে বিবাহ হিসাবে গণ্য করা হবে তখন বর ও কনের পারস্পারিক অধিকার ও কর্তব্য পালন করবে বিয়েতে অবশ্যই দুজন সাক্ষী থাকতে হবে। ইসলামে বিয়ে হল, রাসূল (স:) সুন্নাহ। আমাদের সমাজে অনেক ভাই-বোন বিয়ে-সাদী করা ফরজ;মনে করে বিয়ের সবচেয়ে নোংরামি জিনিস প্রেম-ভালোবাসা হালাল বানিয়ে ফেলেছে। 

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলে, এটা তাদের মাথায় আসছে না এখনকার তরুণ-তরুণীদের, জ্ঞান অর্জন করা ফরজ, সালাত আদায় করা ফরজ, এইগুলো যে ফরজ তা জানে না। এখনকার তরুণ-তরুণীরা কোনটার গুরুত্ব বেশি ফরজ নাকি সুন্নাহ। হে যুবসমাজ রেখে রাখো আজ বিয়ে করা রাসূল অনেকগুলো সুন্নাহ মধ্যে অন্যতম। যেহেতু রাসূল (স.) নিজেই বিয়ে-সাদী করেছে তাই আমরাও বিয়ে-সাদী করবো কিন্তু বৈধ পন্থায়।

বিয়ে শব্দগত উৎপত্তি

ইসলামে শরীয়াহ মোতাবেক, বিবাহ হচ্ছে দুজনের মধ্যে চুক্তি। বিবাহ শব্দটি আরবি শব্দ যার অর্থ বিবাহের চুক্তি বা স্বীকারোক্তি। আধুনিক ডিকশনারিতে নিকাহকে বিবাহ , বিবাহ চুক্তি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।;

বিয়ের ইতিহাস

ইসলামে বসন্ত তখনও আসেনি তার পূর্বেকার বিয়ে-সাদী নিয়মনীতি বা ইতিহাস কেমন ছিল চলুন একনজরে দেখে আসি। ইসলাম ও পূর্ব আরব তখনকার সময়ে কেমন বিয়ে-সাদী ব্যবস্থা ছিল তা জানা দরকার।

  • চুক্তিভিত্তিক বিবাহ - বহুবিধ চুক্তি হত বর ও কনের পরিবারের মধ্যে বিয়ে-সাদী বিষয়ে। নিজ গোত্র বা বংশ ব্যতীত বাইরে অন্য গোত্র বা বংশের বিবাহ করতে পারবে না।
  • যুদ্ধবন্দী বিবাহ - তখনকার সময়ে গোত্রে গোত্রে সংঘটিত লড়াই বা যুদ্ধে সংঘটিত হত। যুদ্ধে পরাজিত দলের মহিলাদের যুদ্ধ বন্দী হিসাবে নিজের কাছে রাখতো, বাজারে বিক্রি জন্য নিয়ে আসতো এবং নিজের স্ত্রীদের দাসী হিসাবে বিক্রি করে দেয়া হত।
  • যৌতুকের বিবাহ - কনের পক্ষ থেকে বরপক্ষকে উপহার বা টাকা প্রদান করে বিয়ে দেয়া আর সেটাই হল যৌতুক। যা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
  • উত্তরাধিকার সূত্রে বিবাহ - সেই সময়কার নিয়ম ছিল পিতার মৃত্যুর পরে পুত্র বা ছেলে সন্তান চাইলে সৎ মাকে বিবাহ করতে পারতো।

ইসলাম আগমনের পর বৈবাহিক প্রক্রিয়া পূর্ণগঠন

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের সাথী বা সঙ্গী হিসাবে সূষ্টি করেছেন এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া প্রবিষ্ট করে দিয়েছে (সূরা রুম- ২১) । কুরআনের অন্য সূরায় বলা হয়েছে - স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের জন্য পোশাকস্বরুপ আর তোমরাও তাদের জন্য পোশাকস্বরুপ (সূরা বাকারাহ- ১৮৭)। ইসলামে প্রতিষ্ঠিত পর্যায়ে মুহাম্মদ প্রচলিত বৈবাহিক নিয়মনীতির পূর্ণগঠন করেন। চুক্তিভিত্তিক বিবাহ এবং যৌতুকের বিবাহ রহিত করে কনে বা নারীদের মত প্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত পথ তৈরি করে দেন এবং যৌতুক বা পণ পাত্রীপক্ষ থেকে দেওয়ার পরিবর্তে পাত্রপক্ষের থেকে পণ দেওয়ার বিধান চালু করেন যাকে আমরা সহজে বুঝি মোহরানা নামে। পাশাপাশি উত্তরাধিকার বিবাহ এবং যুদ্ধবন্দী চিরস্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। পবিত্র কুরআনের অনেক আদেশ নিষেধ সম্পর্কিত আয়াত রয়েছে।

বিবাহ শর্তসমূহ

পবিত্র কুরআন শরীফের (সূরা নিসা আয়াত নং ৫) বিয়ে-সাদী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়া আমরা এই সম্পর্কিত আরও হাদীস থেকে পায়- রাসূল (স.)  বলেছেন - আবু হুরাইরা সূত্রে বর্ণিত যদি বিয়ের জন্য প্রস্তাব আসা যুবক যদি মুসলিম দ্বীনদার এবং চরিত্র ব্যবহার তোমাকে সন্তুষ্ট করে তাহলে তোমার অধীনস্থ নারীদের সাথে তাদের বিয়ে দিয়ে দাও। এর অন্যথায় হলে পৃথিবীতে ফিৎনা ও দূর্নীতি ছড়িয়ে পড়বে।

আরবি হাদিস وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «تُنْكَحُ المَرْأَةُ لأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا، وَلِحَسَبِهَا، وَلِجَمَالِهَا، وَلِدِينِهَا، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاك». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ বাংলা অনুবাদ আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চারটি গুণ দেখে নারীকে বিবাহ করতে বলেছেন;

১) তার ধন-সম্পদ, ২) তার বংশ মর্যাদা, ৩) তার রূপ-সৌন্দর্য এবং তার ৪) দ্বীন-ধর্ম দেখে। তুমি দ্বীনদার পাত্রী লাভ করতে বা খুঁজে পাও তাহলে সফলকাম। (অন্যথায় তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।)’’

নোট : লোকেরা সাধারণতঃ মহিলার এই চার গুণ দেখে বিবাহ করে থাকে। তুমি দ্বীনদার পেতে আগ্রহী হও, তাকে বিবাহ কর এবং তার সঙ্গ ও সাহচর্য পেয়ে ধন্য হও। [বুখারি ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, নাসায়ি ৩২৩০, আবু দাউদ ২০৪৭, ইবন মাজাহ ১৮৫৮, আহমদ ৯২৩৭, দারেমি ২১৭০]

মুসলিম বিবাহ আইন বাংলাদেশ

মুসলিম বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪ বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে। বিবাহের ৩০ দিনের মধ্যে, দম্পতিকে অবশ্যই তাদের বিবাহ নিবন্ধন করতে হবে। যে কেউ এই আইন লঙ্ঘন করে, এমনকি নিবন্ধীকরণের প্রয়োজন হওয়ার পরেও, তাকে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ টাকা জরিমানা হতে পারে ৩,০০০ টাকা উভয় জরিমানা হতে পারে।

বাংলাদেশের বিবাহ আইন ২০২২

Bangladesh Age of Marriage Act ২০২২ আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে বিয়ে করার জন্য পুরুষদের বয়স ২১ বছর এবং মহিলাদের ১৮ বছর হতে হবে।

পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে পারস্পারিক সমতা

ইসলামে বিবাহকে বোঝাতে ইসলামী আইনশাস্ত্রে ব্যবহৃত হয় (আরবি: ; আল-কাফা)। সুতরাং, নিয়ম হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে যা ভবিষ্যতের স্বামী এবং তার সম্ভাব্য স্ত্রীর মধ্যে সমতা বা সামঞ্জস্যের বিষয়ে অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত। ধর্ম, সামাজিক অবস্থান, নৈতিকতা, ধার্মিকতা, সম্পদ, বংশগতি বা রীতিনীতির মতো অসংখ্য উপাদান সামঞ্জস্যকে প্রভাবিত করে।

এই পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে তাহলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে অজানা তথ্যগুলো জানিয়ে দিন। সবাইকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url