ইদ্দত - ইদ্দত মানে কি - প্রকারভেদ কি কি
ইদ্দত শব্দটি আরবি। এর অর্থ হলো "গণনা করা" বা "গণনাকৃত"। ইসলামী আইনে, ইদ্দত হলো একজন বিবাহিতা মহিলার জন্য নির্ধারিত একটি নির্দিষ্ট সময়কাল, যার মধ্যে তাকে অন্য কারও সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে নিষেধ করা হয়। এই সময়কালে তাকে তার স্বামীর বাড়িতে থাকতে হয় এবং তার সাথে সহবাস করা থেকে বিরত থাকতে হয়।
পোস্টের সূচিপত্র
- ইদ্দত কি
- ইদ্দতের প্রকারভেদ
- ইদ্দত কি ফরজ
- স্বামী মারা গেলে ইদ্দত কত দিন
ইদ্দত কি
ইদ্দত হলো একজন বিবাহিতা মহিলার জন্য নির্ধারিত একটি নির্দিষ্ট সময়কাল, যার মধ্যে তাকে অন্য কারও সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে নিষেধ করা হয়। এই সময়কালে তাকে তার স্বামীর বাড়িতে থাকতে হয় এবং তার সাথে সহবাস করা থেকে বিরত থাকতে হয়।
ইদ্দতের প্রকারভেদ
* **তালাক প্রাপ্তার পর ইদ্দত:** তালাক প্রাপ্তা মহিলার জন্য ইদ্দত তিন মাস। যদি সে গর্ভবতী হয়, তাহলে সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত তার ইদ্দত চলবে।
* **স্বামীর মৃত্যুর পর ইদ্দত:** স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর জন্য ইদ্দত চার মাস ও দশ দিন।
* **সন্দেহের ইদ্দত:** একজন পুরুষ যদি সন্দেহ করে যে তার স্ত্রী অন্য কারও সাথে যৌন মিলন করেছে, তাহলে তার স্ত্রীর জন্য ইদ্দত তিন মাস।
* **মিসয়ার ইদ্দত:** একজন পুরুষ যদি তার স্ত্রীকে তিন মাসের জন্য তালাক দেয়, তাহলে সেই তিন মাসই তার জন্য ইদ্দত।
* **মুতআ'র ইদ্দত:** মুতআ' বিবাহের ক্ষেত্রে, বিবাহের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর স্ত্রীর জন্য ইদ্দত তিন মাস।
* **তাযকিয়ার ইদ্দত:** একজন পুরুষ যদি তার স্ত্রীকে তালাক দেয় এবং পরে তাকে আবার বিয়ে করতে চায়, তাহলে তার জন্য ইদ্দত তিন মাস।
ইদ্দতের সময় একজন মহিলার জন্য নিম্নলিখিত কাজগুলি করা নিষেধ:
* অন্য কারও সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া।
* নতুন পোশাক পরা।
* সুগন্ধি ব্যবহার করা।
* অলংকার পরানো।
* সাজগোজ করা।
* বাইরে যাওয়া।
ইদ্দতের সময় একজন মহিলার জন্য নিম্নলিখিত কাজগুলি করা বৈধ:
* সাধারণ কাজকর্ম করা।
* পরিবারের সাথে সময় কাটানো।
* ধর্মীয় কার্যকলাপ করা।
ইদ্দত হলো একজন বিবাহিতা মহিলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। এই সময়কালে তাকে তার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া উচিত।
ইদ্দত কি ফরজ
না, ইদ্দত পালন করা শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব বিধান। ওয়াজিব মানে হল ফরজে কাছাকাছি অর্থ্যাৎ যা অবশ্যই পালনীয় যদি এটি পালন করতে অনীহা প্রকাশ করে সেই নারী মহা পাপে লিপ্ত হয়ে গেলো। কুরআনে ইদ্দতের বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা আল-বাকারায় বলা হয়েছে:
> وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ
> (অর্থ: তালাকপ্রাপ্তা নারীদের জন্য তিনটি মাসিক ঋতু পর্যবেক্ষণ করা বাধ্যতামূলক।)
ইদ্দত পালন করা একজন মহিলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কর্তব্য। এটি একটি সামাজিক ও আইনগত প্রয়োজনও। ইদ্দতের মাধ্যমে একজন মহিলার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া হয়। নারীর জীবন চলার পথে মহান আল্লাহ তায়ালা তার স্বামীকে কর্তা ও তত্ত্বাবধায়ক বানিয়ে দিয়েছেন (সূরা নিসা ৪:৩৪ নং আয়াতে)। ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব হয় কেবল মাত্র স্বামী-স্ত্রী দৈহিক মিলন ঘটলে (সূরা আহযাব ৩৩:৪৯ নং আয়াত)। হায়েজ শুরু বা বন্ধ যাই ঘটুক ইদ্দত সময়কাল তিন মাস, সে গর্ভবতী হয় সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার দ্বারা তার ইদ্দত পূর্ণ হয়ে যাবে ( সূরা তালাক ৬৫: ৪ নং আয়াত)
ইদ্দতের ওয়াজিব বিধান নিম্নলিখিত কারণের কারণে:
* **বিবাহ বন্ধনের বিচ্ছেদের পর একজন মহিলার জন্য একটি সময়কালের প্রয়োজন হয় যাতে সে মানসিকভাবে এবং শারীরিকভাবে পুনরুদ্ধার করতে পারে।**
* **ইদ্দতের মাধ্যমে একজন মহিলার গর্ভাবস্থার অবস্থা নিশ্চিত করা হয়।**
* **ইদ্দতের মাধ্যমে একজন মহিলার জন্য অন্য কারও সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া থেকে বিরত থাকার সুযোগ দেওয়া হয়।**
স্বামী মারা গেলে ইদ্দত কত দিন
স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর জন্য ইদ্দত চার মাস ও দশ দিন। এই সময়কালে তাকে অন্য কারও সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে নিষেধ করা হয়। এই সময়কালে তাকে তার স্বামীর বাড়িতে থাকতে হয় এবং তার সাথে সহবাস করা থেকে বিরত থাকতে হয়।
ইদ্দতের চলাকালীন সময় একজন মহিলার জন্য নিম্নলিখিত বিধান কার্যকর হবে -তা হল উক্ত সময়ের মধ্যে কোনো পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে না, তৈরিকৃত পোশাক পড়তে পারবে না, কসমেটিক আইটেম সম্পুর্ণ নিষেধ (সুগন্ধি, অলংকার, সাজগোজ এবং বাইরে বের হওয়া)। তবে ইদ্দত ঘটনাকালীন সময়ের মধ্যে একজন যে বৈধ কাজগুলো করতে পারবে তাহল - নিজের বা পরিবারের জন্য সাধানণ কাজকর্ম, নিজ পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবে, ধমীয় যাবতীয় কার্যকালাপ পালন করতে পারবে ঘরে অবস্থান করে।
স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর ইদ্দত পালন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সামাজিক কর্তব্য। এটি একজন মহিলার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়। ইদ্দতের চার মাস ও দশ দিনের সময়কাল নিম্নরূপ নির্ধারিত হয়:
* প্রথম চার মাস হলো গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকার সময়। এই সময়ের মধ্যে যদি স্ত্রী গর্ভবতী হয়, তাহলে সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত তার ইদ্দত চলবে।
* শেষ দশ দিন হলো গর্ভধারণের সম্ভাবনা না থাকার সময়। এই সময়ের মধ্যে স্ত্রী অন্য কারও সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।
স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর ইদ্দত পালন না করলে তার উপর সামাজিক নিন্দা আসবেই সেই মহান আল্লাহ তায়ালা ভয়ংকর শাস্তি ঘোষণা দিয়েছে এই আইনের সঠিকভাবে পালন না করলে।
কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url