বাংলাদেশের অর্থনীতি মার্কস -০৩ পর্ব ০৫
২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনার অষ্টম বার্ষিকী গৃহীত হয়েছে। এই পরিকল্পনাটি ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রণয়ন করা হয়েছিল। অভ্যন্তরীণ আয়ের উৎস বাস্তবায়নের লক্ষ্যপূরণসহ এবং বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতার প্রায় ১১.৫ ভাগ ছিল। পরিকল্পনাটির লক্ষ্য হল ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা।
বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক হল এমন ব্যাংক যা অন্য দেশের আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত হয়। এটি একটি দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক বিনিয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সেবা প্রদান করে, যার মধ্যে রয়েছে:
- * আমানত গ্রহণ
- * ঋণ প্রদান
- * চলতি হিসাব পরিচালনা
- * বিনিময় লেনদেন
- * বৈদেশিক বাণিজ্য সহায়তা
- * বিনিয়োগ পরামর্শ
বাংলাদেশে বর্তমানে ৯টি বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। এগুলি হল:
- * সিটিব্যাংক এনএ - ৮ গুলশান এভিনিউ, গুলশান-১ ১৮১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ৩ টি শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে।
- * এইচএসবিসি - ৭ টি শাখার কার্যালয় খুলে ব্যাংকি পরিচালনা করছে যা প্রতিষ্ঠিতকাল ১৮৬৫ সাল।
- * উরি ব্যাংক - ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ৬ টি শাখা সমন্বয়ে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।
- * কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন - ১৯২০ সালে ১৪ টি শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
- * হাবিব ব্যাংক লিমিটেড - ৭ টি শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা করে যার প্রতিষ্ঠিতকাল ছিল ১৯৪১ সালে।
- * স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ - বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মধ্যে সর্বাধিক শাখা নিয়ে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে। শাখা সংখ্যা ২৩ টি আর প্রতিষ্ঠিত কাল ১৯৪৮ সাল।
- * ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান - ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় যার শাখার সংখ্যা মাত্র ৪ টি।
- * ভারতীয় স্টেট ব্যাংক- মজার ব্যাপার হলো প্রতিবেশি দেশের একটি ব্যাংক বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৫ সালে এখনো পর্যন্ত ৬টি শাখার নিয়ে সেবা দিচ্ছে।
- * ব্যাংক আলফালাহ্ - ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শাখা সংখ্যা মাত্র ৮টি।
বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলি:
- * দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- * দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য সহজতর করে।
- * দেশে আর্থিক সেবার প্রসার ঘটায়।
বাংলাদেশে বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়।
বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। সুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে:
- * এগুলি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং অভিজ্ঞ।
- * এগুলিতে বিপুল পরিমাণ পুঁজি রয়েছে।
- * এগুলি নতুন প্রযুক্তি এবং জ্ঞান নিয়ে আসে।
অসুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে:
- * এগুলি স্থানীয় ব্যাংকগুলির তুলনায় বেশি খরচবহুল।
- * এগুলি স্থানীয় বাজারের সাথে পরিচিত নাও হতে পারে।
- * এগুলি স্থানীয় নিয়ম-নীতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে অসুবিধা হতে পারে।
বীমা ব্যবস্থাপনা
বাংলাদেশে বীমা ব্যবস্থাপনা ক্রমশ বিকশিত হচ্ছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে প্রথম বীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে দেশে ১৭টি সাধারণ বীমা কোম্পানি এবং ১৪টি জীবন বীমা কোম্পানি রয়েছে। বীমা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অধীনে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) রয়েছে। বীমা ব্যবস্থাপনার প্রধান উদ্দেশ্য হল গ্রাহকদের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা। বীমা কোম্পানিগুলি বিভিন্ন ধরনের বীমা পলিসি প্রদান করে, যেমন জীবন বীমা, স্বাস্থ্য বীমা, সম্পত্তি বীমা, দুর্ঘটনা বীমা, গাড়ি বীমা ইত্যাদি। বীমা পলিসির মাধ্যমে গ্রাহকরা বীমা কোম্পানি থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাওয়ার অধিকার অর্জন করেন যদি তারা নির্দিষ্ট কোন ঘটনার শিকার হন।
বাংলাদেশে বীমা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- * বীমা সম্পর্কে জনসচেতনতা কম
- * বীমা পলিসির দাম বেশি
- * বীমা কোম্পানিগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা কম
এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার জন্য সরকার এবং বীমা কোম্পানিগুলি একসাথে কাজ করছে। সরকার বীমা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। বীমা কোম্পানিগুলিও তাদের পলিসির দাম কমানো এবং গ্রাহকদের সেবা উন্নত করার জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশে বীমা ব্যবস্থাপনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলে মনে করা হচ্ছে। সরকার এবং বীমা কোম্পানিগুলির যৌথ প্রচেষ্টায় বীমা ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর অবদান বৃদ্ধি পাবে।
বীমা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছু সাম্প্রতিক উন্নয়ন হল:
- * ২০১৪ সালে জাতীয় বীমা নীতি প্রণয়ন
- * ২০১৫ সালে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গঠন
- * ২০১৬ সালে বীমা আইন সংশোধন
- * ২০১৭ সালে বীমা বাজারের আকার ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম
- * ২০১৮ সালে বীমা খাতে বিদেশী বিনিয়োগের অনুমতি
এই উন্নয়নগুলি বাংলাদেশের বীমা ব্যবস্থাপনাকে আরও উন্নত করতে সহায়তা করেছে।
আইসিবি
**ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)** হল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সরকারি মালিকানাধীন বিনিয়োগ কোম্পানি। এটি রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ ১৯৭৬ (১৯৭৬ সালের ৪০ নং অধ্যাদেশ)-এর অধীনে ১ অক্টোবর ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একাধারে একটি বিনিয়োগ ও মার্চেন্ট ব্যাংক। আইসিবির প্রধান কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। এছাড়াও, এটির চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনায় শাখা রয়েছে।আইসিবির উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়তা করা। এটি বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করে, যার মধ্যে রয়েছে:
- * পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ
- * ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিতে বিনিয়োগ
- * শিল্প ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ
- * প্রকল্প অর্থায়ন
- * আর্থিক পরামর্শ প্রদান
আইসিবি বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী। দেশের কোম্পানি সমূহের মূলধনের ঘাটতি পুরনো আইসিবি সহায়তা প্রদান করে। আইসিবির ২৭% শতাংশ শেয়ার সরকারের এবং বাকি ৭৩ শতাংশ শেয়ার বিভিন্ন ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির। এটি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত।আইসিবি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে, শিল্প ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিকাশে এবং প্রকল্প অর্থায়নে সহায়তা করে।
আইসিবির কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন হল:
- * বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা
- * দেশের শিল্প ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিকাশে সহায়তা করা
- * বিভিন্ন প্রকল্প অর্থায়নে সহায়তা করা
- * আর্থিক পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে অবদান রাখা
আইসিবি ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরো
**এনজিও বিষয়ক ব্যুরো** বাংলাদেশের সরকারের একটি বিভাগ যা অলাভজনক সংস্থাগুলির (এনজিও) নিবন্ধন, তত্ত্বাবধান এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী। এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ।
**ইতিহাস**
এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি মূলত একটি অধিদপ্তর ছিল, কিন্তু ২০১৬ সালে এটি একটি ব্যুরোতে উন্নীত হয়।
**কার্যাবলি**
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর প্রধান কার্যাবলি হল:
- * অলাভজনক সংস্থাগুলির নিবন্ধন
- * অলাভজনক সংস্থাগুলির কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান
- * অলাভজনক সংস্থাগুলির নিয়ন্ত্রণ
- * অলাভজনক সংস্থাগুলির সাথে সরকারের সমন্বয়
**নিবন্ধন**
বাংলাদেশে কাজ করার জন্য, একটি অলাভজনক সংস্থাকে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য, সংস্থাটিকে নিম্নলিখিত নথিপত্র দাখিল করতে হবে:
- * আবেদনপত্র
- * সংস্থার সনদপত্র
- * সংস্থার গঠনতন্ত্র
- * সংস্থার কার্যক্রমের বিবরণ
- * সংস্থার আর্থিক বিবরণ
**তত্ত্বাবধান**
এনজিও বিষয়ক ব্যুরো অলাভজনক সংস্থাগুলির কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান করে। এটি নিশ্চিত করে যে সংস্থাগুলি তাদের গঠনতন্ত্র এবং আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে কাজ করছে।
**নিয়ন্ত্রণ**
এনজিও বিষয়ক ব্যুরো অলাভজনক সংস্থাগুলির নিয়ন্ত্রণ করে। এটি নিশ্চিত করে যে সংস্থাগুলি তাদের সম্পদগুলি সঠিকভাবে ব্যবহার করছে এবং তাদের কার্যক্রমগুলি জনগণের স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে।
**সমন্বয়**
এনজিও বিষয়ক ব্যুরো অলাভজনক সংস্থাগুলির সাথে সরকারের সমন্বয় করে। এটি নিশ্চিত করে যে সংস্থাগুলি সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচিগুলিতে অবদান রাখতে সক্ষম।
**বর্তমান অবস্থা**
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের হিসাবে, বাংলাদেশে প্রায় ১৮,০০০ এনজিও নিবন্ধিত রয়েছে। এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এই সংস্থাগুলির নিবন্ধন, তত্ত্বাবধান এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করে।
কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url