OrdinaryITPostAd

অর্থনীতি পঙ্গু করার পিছনে সরকারের যতো অনিয়ম

অর্থলুট, পাচার, অনিয়ম, রিজার্ভ চুরি। বাংলাদেশের ব্যাংক সেক্টর বর্তমানে ধ্বংসের মুখোমুখি। উন্নয়নের আড়ালে বিগত সরকারের যত আর্থিক কেলেঙ্কারি দ্বারপ্রান্তে শেখ হাসিনার সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট এবং অনিয়মের ফলে দেশের অর্থনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ সংকট। বিগত ২০০৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মোটাদাগে ২৪ টি বড় অনিয়মের কারণে ব্যাংক থেকে লুট হয়েছে প্রায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা এইসবের মধ্যে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে নেওয়া ঋণের বেশিরভাগই লুট হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন আওয়ামী লীগ গত দেড় দশকে কিছু রাস্তাঘাট, ব্রিজ মেট্রোরেলের মতো অবকাঠামো তৈরি করেছে কিন্তু এর বিপরীতে ধ্বংস করে দিয়েছে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান। আমাদের দেশের বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নির্বাচন কমিশনসহ বেঁচে নেই কোন প্রতিষ্ঠান। সর্বোপরি ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে যা স্পষ্ট হয়ে উঠছে প্রতিটি নাগরিকের জীবনযাত্রায়ও।

অর্থনীতি পঙ্গু করার পিছনে সরকারের যতো অনিয়ম

২০০৯ সালে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা তবে আজ সেই ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা এর মধ্যে দেড় দশকে দেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় ১৭ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা লাগামছাড়া অর্থপাচারের ফলে দেশের অর্থনীতির চাকা থেমে গেছে। যা আরও সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশকে। ২০১১ সালের শেয়ারবাজারের ঘটে যাওয়া ঘটনা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য একটি বড় ধাক্কা। ২০০৯ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক উত্থান দেখা যায় কিন্তু ২০১১ সালের জানুয়ারিতে আকস্মিকভাবে ঘটের ১০% পতন এর পরের মাসে আরো বড় পতন ঘটে যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে সেই সময়ে বাজারের অস্থিতিশীলতার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে বিনিয়োগকারীরাও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হন। এই শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি সঙ্গে ৬০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি দায়ী করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো শাস্তি মূলক ব্যবস্থা। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে অন্যতম বড় কেলেনকারি হল হলমার্ক, সোনালী ব্যাংক, ঋণ জালিয়াতি। ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে জাল কাগজ পত্রের মাধ্যমে মোট টাকার পরিমাণ ৩,৫৪৭ কোটি ( হলমার্ক ২,৬৮৬ কোটি, টি অ্যান্ড ব্রাদার্স ৬০৯.৬৯ কোটি, প্যারাগন গ্রুপ ১৪৭ কোটি, নকশি নিট ৬৬.৩৬ কোটি.) কোম্পানির মধ্যে ভাগ হয় বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি ছিল সবচেয়ে বড় ব্যাংক জালিয়াতি যা দেশবাসীকে হতবাক করে দিয়েছিল।

একইভাবে বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি ছিল আরো একটি বিশাল দুর্নীতি ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ব্যাংকটির নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে কর্মকর্তারা কোনোরকম যাচাই বাচাই ছাড়াই প্রায় ৪ হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ ইস্যু করেন এর ফলে দেশের ব্যাংকিং খাতের উপর পড়েছে চরম প্রভাব এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি পদ্মা সেতুর দুর্নীতি কেলেঙ্কারি বিশ্বব্যাংকের 1.2 বিলিয়ন ঋণ বাতিলের কারণ হয় দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক ঋণ বাতিল করলেও বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় যদিও প্রকল্পটির সফলভাবে শেষ হয় তবে দুর্নীতির অভিযোগ দেশের সুনাম ক্ষুন্ন করে।

২০১৬ সালে ঘটে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে রিজার্ভ চুরির ভয়াবহ ঘটনা হ্যাকাররা একটি সাধারন ইমেইলের মাধ্যমে বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ চুরি করে এই অর্থ নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত ছিল যা ফিলিপাইনের বিভিন্ন ব্যাংক এবং ক্যাসিনোতে স্থানান্তরিত হয় এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সোনার মান পরিবর্তনের ঘটনা ও একটি বড় কেলেঙ্কারি হিসেবে সামনে আসে ২২ ক্যারেটের সোনার জমা রাখার পর হয়ে যায় ১৮ ক্যারেট। এর ফলে সরকারের ক্ষতি হয় প্রায় দুই কোটি টাকা শেখ হাসিনা সরকারের দেড় দশকের উপরে শাসন করা সময়ে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেমে আসে ভয়াবহ বিপর্যয়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেন- লুট হওয়া অর্থ দেশের জিডিপি শতাংশ প্রায় ২ % এবং ২৩-২৪ বাজেটের ১২ শতাংশ বেশি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন এই ধরনের অনিয়ম বন্ধ করা না গেলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে সম্প্রতি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আরও সংকটময় হয়ে উঠছে। যখন সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়ার পরে তা ফেরত আসছে না এদিকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও বাংলাদেশকে সতর্ক করছেন যদি এই অর্থনৈতিক অবস্থা অব্যাহত থাকে তাহলে বাংলাদেশকে একটি ঋণখাতে হতে পারে। তবে সব শেষে 18 লাখ 35 হাজার কোটি টাকার সরকারি ঋণ রেখেই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবার বেশ ছেড়ে পালিয়ে যান অন্তর্বর্তী সরকারেই দুর্নীতি তদন্তে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পুনগঠনের চেষ্টা করছে তবে এই বিপর্যয়ের মুখে দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন করা কতটা সম্ভব সেটাই এখন সময়ের প্রশ্ন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url