নিজেকে হেয় করে দেখা
পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন একবার তার বন্ধুদের বলেছিলেন যখন কেউ তার প্রশংসা করে তখন তিনি অস্বস্তিতে পড়ে যান তাকে নিয়ে এই যে মাতামাতি হচ্ছে তিনি আসলে এর যোগ্য তিনি এমনটাই মনে করতেন অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস তার ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকা সত্বেও বিষয়ে বহু পুরস্কার পেল তার কাছে সব সময় মনে হতো তিনি জীবনে কিছুই করতে পারেননি আলোচিত ব্যক্তিদের এমনটা ভাবার কারন তারা প্রত্যেকেই অবস্থা সিনড্রোমে আক্রান্ত যখন একজন মানুষ নিজেই নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতা কে খাটো করে দেখেন ধরুন
আপনি পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করেছেন বা কাজে ভালো পারফর্মেন্স এর জন্য পুরস্কার পেয়েছেন এ নিয়ে আশেপাশের মানুষ আপনার প্রশংসা করলেও নিজের যোগ্যতা নিয়ে আপনার ব্যাপক সন্দেহ আপনার মনে হয় এই ভালো রেজাল্ট বা পুরস্কার সবই দৈবক্রমে বাবা শুধুমাত্র ভাগ্যের জোরে বাবা আপনি আসলে কিছুই করেননি প্রতিনিয়ত ভয়াভয় থাকেন যে কোনদিন হয়তো মানুষ আপনার অযোগ্যতার ব্যাপারে জেনে যাবে এভাবে নিজের অর্জন যোগ্যতা মেধা নিয়ে আপনি যদি প্রতিনিয়ত সন্দেহ করতে থাকেন তাহলে আপনি হয়তো সিনড্রোম আছে ইম্পোস্টার সিনড্রোম কি কিভাবে বেরিয়ে আসবেন সে বিষয়ে ব্যাখ্যা করব আমি এই পোস্টে এখানকার সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বৃটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে এবং বিভিন্ন মেডিকেল আরেকটি কথা জানিয়ে রাখি শুরুতে যে আলোচিত কয়েকজন ব্যক্তির কথা বলেছি অনেকেই তাদের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন।
অফিসিয়াল ইম্পোস্টার সিনড্রোম কোন বৈজ্ঞানিকভাবে উত্তরণের উপায় নেই। ব্যক্তি চিন্তার ধরন দেখে বিষয়টি আন্দাজ করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা এর প্রধান লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি হলো আপনি কোন ভাল কাজের জন্য পুরস্কার পেলে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে প্রমোশন পেলে বা কেউ প্রশংসা করলে আপনি অস্বস্তিতে পড়েছে মনে হতে থাকে আপনি এর যোগ্য না অন্যায় ভাবে দেয়া হয়েছে কোথায় আপনি নিজের মেধা ও শ্রমের কিছু অর্জন করলেও নিজের দক্ষতা যোগ্যতা সম্পর্কে ভীষণ সন্দেহে থাকেন আর একটি লক্ষণ হলো আপনার সব সময় মনে হয় আপনি খুব একটা বুদ্ধিমান না আপনার তেমন কোনো যোগ্যতা নেই প্রচণ্ড সমস্যায় ভোগেন এ কারণে কোনো স্বীকৃতি বা প্রশংসা পেলে মনে হয় এটা আপনি ভাগ্যের জোরে না হলে দৈবক্রমে পেয়েছেন আপনার কাজ কেমন হয়েছে সেটা মূল্যায়ন করা হতে পারে এই ভেবে আপনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন কেননা আপনি ভয় থাকেন যে যেকোন সময় আপনার অযোগ্যতা ধরা পড়ে যেতে পারেন বিষয়টা এমন যে আপনি সফলতা চান কিন্তু সে সফলতা পেলে আপনি আবার ভয় পেতে থাকেন আপনি ভাল রেজাল্ট করে বা প্রমোশন পেয়ে খুশি হতে পারেন না আপনি যেখানে কথা বলা প্রয়োজন সেখানে কিছু বলতে পারেন না যেমন কেউ আপনাকে ছোট করে কথা বলছে আপনি তা প্রতিরোধ করতে পারেন না কিন্তু বন্ধুকে অপমান করলে থেকে প্রতিবাদ করতে পারেন না জরুরি মিটিং এ আপনি যে কাজ করেছেন অনেক শ্রম দিয়েছেন এগুলো বলতে পারেন না আপনার কাছে কৃতিত্ব অন্য কেউ নিয়ে গেলেও চুপ হয়ে থাকেন কিংবা সামনে যে প্রজেক্ট আসছে এ কাজটি আপনি করতে চান এ জরুরী কথা গুলো বলতে পারেন না নিজের প্রতি এই সন্দেহের কারণে এই ইম্পোস্টার সিনড্রোমে আক্রান্ত ওরা নিজের প্রতিটি কাজ একদম নিখুঁত ভাবে করতে চাই এভাবে তারা অন্য যে কারো চাইতে কাজের চাপ অনেক বেশি নেয় না নিজেদের অক্ষম ভাবতে শুরু করে এখন মনে হতে পারে কোন কাজ নিখুঁতভাবে করাতো ভালো বিষয় সবার কাছে তা পারফেক্ট না তাদের কাছে নিখুঁত এর সংজ্ঞা অনেক জটিল রোগে আক্রান্তরা প্রক্রাস্টিনেশন ভুগতে পারেন তাদের মধ্যে মানুষকে খুশি করার প্রবণতা প্লেসিং কাজ করে
নিজের আত্ম উন্নয়নের জন্য কিছু আত্মসংশোধন ভালো কিন্তু ইম্পোস্টার সিনড্রোম খুব দ্রুতই আত্মবিনাশের দিকে ঠেলে দিতে পারে সেন্সর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বলছেন তিনি এ সমস্যায় আক্রান্ত অনেককে পেয়েছেন যারা উঁচুমানের চাকরি পর্যন্ত ছেড়ে দিতে চেয়েছেন কারণ তাদের ভয় ছিল যদি অন্যরা তার সম্পর্কে জেনে যায় অথচ সঠিক পদ্ধতিতে যোগ্যতা অনুযায়ী তারা কাজ পেয়েছিলেন যারা ভোগেন তারা ক্যারিয়ারের দিকে ওঠার ক্ষেত্রে দেন কারণ তারা মনে করেন ইতোমধ্যে তারা অনেক উপরে উঠে গেছে প্রতিনিয়ত নিজের জ্ঞান সক্ষমতা বারবার সন্দেহ করায় তার ভেতরের যে অসীম সম্ভাবনার সেটা সব সময় অজানাই থাকে নতুন কিছু করার উত্তম থাকে না এতে করে আপনি যে কাজটা ভালো সে সংক্রান্ত চাকরি-ব্যবসা উচ্চশিক্ষার জন্য কিংবা প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে আবেদন করেন না অথচ যেখানে আপনি চেষ্টা করলে হয়তো খুব ভালো করতে পারতেন আপনার আইডিয়া শেয়ার করেনা কারন আপনি এসব আইডিয়াকে যোগ্য বলে মনে করেন এভাবে ভালো ভালো সুযোগ আপনার হাতছাড়া হয়ে যায় এসব কারণে মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে ইম্পোস্টার সিনড্রোম কর্ম ক্ষেত্রে খুব সাধারণ একটি সমস্যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যোগ্য ও মেধাবীদের বেশি ভুগে থাকেন এক্ষেত্রে করণীয় হলো নিজের সমস্যাটি নিয়ে বিশ্বস্ত কারও সাথে খোলামেলা কথা বলা তখন আপনি জানতে পারবেন আপনি একা নন আপনার মত এমন অনেকেরই নিজের অর্জন কে খাটো করে দেখার প্রবণতা আছে অনেকেরই মাঝে মাঝে নিজেকে বোকা এভাবে আপনি নিজের সংসার কাটাতে পারবেন নিজের অপূর্ণতা মেনে নিতে শিখবেন কাজ করতে গেলে ভুল হতেই পারে এই ভুলকে স্বাভাবিকভাবে নিতে শিখবেন পরিশেষে কাটিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ফিডব্যাক অন্যের চোখে নিজেকে দেখলে সেটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় বেশী নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করবেন না নিজের গত বছরের কাজের সাথে বছরের মিলিয়ে নেওয়ার চিন্তা গ্রহণ করুন আপনার ব্রিলিয়ান্ট হওয়ার দরকার নেই একটা ভালো করতে পারা ও সফলতা যখন আপনি জানবেন যে আপনার ইম্পোস্টার সিনড্রোম আছে তখন আপনি সচেতন ভাবে আপনার ব্যাপারে মানুষের প্রশংসা বা স্বীকৃতি ইতিবাচকভাবে নেয়া শুরু করবেন আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করবেন যে আপনি যা অর্জন করেছেন সেটা মেধা ও যোগ্যতার জড়িয়ে করেছেন তখন আর প্রশংসা শুনে বা পুরস্কার পেলে অস্বস্তি লাগবে না বরং খুশী হবেন এর পরের ধাপ হলো নিজেকেও করা বন্ধ করা এক্ষেত্রে আপনি কোন শব্দগুলো ব্যবহার করছেন সেদিকে মনোযোগ দিন যেমন আমি এটা ভাগ্যের জোরে পেয়েছে অথবা তারা দয়া করে আমাকে এ স্বীকৃতি দিয়েছে কিংবা তাদের হয়তো কোথাও ভুল হয়েছে এজন্য আমাকে পুরস্কৃত করেছে এতে এমন কিছু নয় যে কেউ পেতে পারে এই কথাগুলো বলার চেয়ে বরং বলুন আমি অনেক পরিশ্রম করার কারণেই নিজের যোগ্যতা বলে স্বীকৃতি পেয়েছে তাই আজকের পর থেকে কেউ প্রশংসা করলে বা পুরস্কার দিলে তাকে ধন্যবাদ আপনি কেন পেলেন আর কেউ পেলে ভালো হতো আমি কি যোগ্য কিনা এমন কথা বলবেন না এক্ষেত্রে আপনি আপনার ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে যেসব সাফল্য অর্জন করেছেন সেগুলো সব কিছু তালিকার মত করে লিখুন লেখাগুলো কোন কোন ক্ষেত্রে ভালো করেছে তা নিয়ে ভাবুন এবং সেই সাফল্যগুলো আপনার চারপাশের মানুষের সাথে শেয়ার করুন যখনি মনে হবে আপনি অযোগ্য তখন নিজেকে নিজে একটি বার্তা দিন কিছু শুরু করার সময় সব মানুষই কিছুটা অপ্রস্তুত থাকে আপনি এখন হয়তো অনেক কিছুর উত্তর জানেন না কিন্তু ধীরে ধীরে সবকিছু জানার আছে কথা বলতে বা প্রশ্ন করতে গেলে যদি হয় তাহলে আপনি কি বলবেন কীভাবে করবেন সেটা মাথার ভেতরে একবার রিহার্সেল করে নিন এতে আপনার নার্ভাসনেস অনেকটাই কমে যাবে তবে সবচেয়ে ভালো হল যদি কোন মনোবিশারদ পরামর্শ নিতে পারেন তারা আপনাকে এসব থেকে বেরিয়ে আসার পথ দেখাতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারবে।
সাধারণত দুই ধরনের পরিস্থিতি শিশুদের মধ্যে ইম্পোস্টার সিনড্রোম তৈরি করতে পারে এক হল ক্রমাগত সমালোচনা এবং আরেকটি হলো অতিরিক্ত প্রশংসা যেসব বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের কেবল সমালোচনা করেন রেজাল্ট ভালো করলেও বলেন আরো ভালো কেন করনি শিশুর আত্মবিশ্বাস ভেঙে যায় তারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও নিজের প্রতি বিশ্বাস আনতে পারে না আবার যে বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের অতিরিক্ত প্রশংসা করেন যেমন তুমি বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান বাচ্চা তুমি বেস্ট মন্তব্যগুলো শিশুদের মধ্যে প্রত্যাশার চাপ তৈরি করতে পারে তারা বেস্ট হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে যায় বেস্ট হতে না পারলে তারা ভেঙে পড়ে এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের উচিত শিশুদের কাজের ফলাফলকে নয় বরং ভালো কিছু করতে এসেছে চেষ্টা করছে সেটার প্রশংসা করা এবং দুর্বলতাগুলো বাস্তবসম্মতভাবে বুঝতে সাহায্য করা যেন তারা সফলতা অর্জনে আত্মবিশ্বাসী হয় আবার ব্যর্থতাকেও স্বাভাবিকভাবে নিতে শেখাতে হবে।
ইম্পোস্টার সিনড্রোম একবার কাটিয়ে উঠতে পারলে আপনি নিজের অসীম সম্ভাবনার পরখ করতে পারবেন যেকোন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সুযোগের সদ্ব্যবহার সাহস পারবেন তাই যত দ্রুত সম্ভব নিজেকে সাহায্য করে তবে মনে রাখবেন সবকিছুর জন্য সময় প্রয়োজন বিশেষ করে মনের অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে এই পদ্ধতি গুলো আপনি যত বেশি অনুশীলন করবেন ততই স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন ।
কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url