প্রবাসীদের জন্য আর্থিক সেবা ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন
বাংলাদেশে নিবাসী/অনিবাসী কারা?
উত্তর: Foreign Exchange Regulation Act, 1947 (সপ্টেম্বর, ২০১৫ পর্যন্ত সংশোধিত) অনুযায়ী নিবাসী বাংলাদেশী ব্যক্তি" অর্থ: (১) এইরূপ ব্যক্তি যিনি বিগত ১২ (বার) মাসের মধ্যে ৬ (ছয়) মাস অথবা এর অধিক সময় বাংলাদেশে অবস্থান করেছেন; (২) এমন ব্যক্তি যিনি ৬ (ছয়) মাসের কম নয় এরূপ সময়কাল নিবাসী অথবা কর্ম ভিসায় অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন; (৩) এমন ব্যক্তি যার বাংলাদেশে ব্যবসা রয়েছে; (৪) এরূপ ব্যক্তি যার ব্যবসার প্রধান কার্যালয় বাংলাদেশের বাইরে অবস্থিত কিন্তু শাখা অফিস অথবা লিয়াজোঁ অফিস অথবা প্রতিনিধি অফিস বাংলাদেশে অবস্থিত; (৫) বিদেশে অবস্থিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক, কনস্যুলার ও অন্যান্য প্রতিনিধি অফিস এবং উক্ত অফিসসমূহে কর্মরত বাংলাদেশী নাগরিকগণ; (৬) এরূপ ব্যক্তিবর্গ যারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের চাকুরীতে কর্মরত অথবা ছুটিতে রয়েছেন। উপরোক্ত সংজ্ঞার আলোকে বাংলাদেশে নিবাসী হিসেবে গণ্য নয় এমন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান অনিবাসী হিসেবে গণ্য হবেন।
বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়ের বৈধ পক্ষ কারা?
উত্তর: বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স প্রাপ্ত তফসিলি ব্যাংক শাখাগুলো (authorised dealer বা অনুমোদিত ডিলার নামে পরিচিত) বিভিন্ন খাতে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় ও বিক্রয়ের জন্য বৈধ পক্ষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সধারী মানিচেঞ্জাররা বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় এবং বিদেশগামী যাত্রীদের নিকট ভ্রমণখাতে নগদ বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রয়ের জন্য বৈধ পক্ষ। অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক ও লাইসেন্সধারী মানিচেঞ্জার ছাড়া অন্য কোন পক্ষের সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় Foreign Exchange Regulation Act, 1947 (সপ্টেম্বর, ২০১৫ পর্যন্ত সংশোধিত) এর আওতায় দন্ডনীয় অপরাধ।
কোন যাত্রী বিদেশ থেকে কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে আনতে পারেন?
উত্তর: বিদেশ থেকে আগত যাত্রী যে কোন পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে আনতে পারেন; তবে এর পরিমাণ দশ হাজার মার্কিন ডলার বা সমমূল্যমানের বৈদেশিক মুদ্রার বেশি হলে শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে FMJ ফরমে সমুদয় অংকের ঘোষণা প্রদান করতে হয়।
বিদেশ থেকে আনীত বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে রাখা যায় কী?
উত্তর: ক. বাংলাদেশে নিবাসী কোন ব্যক্তি বিদেশ থেকে সঙ্গে আনা অনধিক দশ হাজার মার্কিন ডলার বা সমমূল্যমানের বৈদেশিক মুদ্রা নিজের কাছে বা অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সী ডিপোজিট হিসাবে জমা রাখতে পারেন, পরবর্তী বিদেশ যাত্রায় সঙ্গে নিয়েও যেতে পারেন। দশ হাজার মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত পরিমাণ আনীত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসার এক মাসের মধ্যে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে/ লাইসেন্সধারী মানিচেঞ্জারের কাছে বিক্রি বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট একাউন্টে জমা রাখা নিবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক। খ. বিদেশ থেকে আগত অনিবাসীরা সঙ্গে আনা (দশ হাজার মার্কিন ডলার বা সমমূল্যমানের বৈদেশিক মুদ্রার বেশী হলে শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে ঘোষণা প্রদান সাপেক্ষে) বৈদেশিক মুদ্রা নিজের কাছে বা অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে নন রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট একাউন্ট/ প্রাইভেট ফরেন কারেন্সি হিসাবে জমা রাখতে পারেন; আনীত বৈদেশিক মুদ্রার অব্যবহৃত অংশ বাংলাদেশ ত্যাগকালে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন।
বিদেশ থেকে সঙ্গে আনা বৈদেশিক মুদ্রা নগদায়নের ক্ষেত্রে কী ধরনের রেকর্ড রাখা বাঞ্ছনীয়?
উত্তর: আনীত বৈদেশিক মুদ্রার বিধিসম্মত সদ্ব্যবহারের প্রমাণ হিসেবে অনুমোদিত ডিলার ব্যংক বা লাইসেন্সধারী মানিচেঞ্জারের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে নগদায়ন সনদপত্র (encashment certificate) সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বাঞ্ছনীয়।
বিদেশ থেকে বাংলাদেশে অর্থ প্রেরণের বৈধ পন্থা কী?
উত্তর: প্রাপকের অনুকূলে রেমিট্যান্স/চেক/ড্রাফট/টিটি/এমটি ইত্যাদি শুধুমাত্র বাংলাদেশে ব্যবসারত কোন ব্যাংকের মাধ্যমে সংগ্রহ বৈধ। প্রবাসী আয় ব্যাংকিং ব্যবস্থার পাশাপাশি এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমেও বাংলাদেশে রেমিট্যান্স করা যায়। বাংলাদেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা সংগৃহীত হবে না এমন কোন পন্থার (যেমন অবৈধ হুন্ডি কার্যক্রম) অবলম্বন Foreign Exchange Regulation Act, 1947 (সেপ্টেম্বর, ২০১৫ পর্যন্ত সংশোধিত) এর আওতায় দন্ডনীয় এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় দন্ডনীয় অপরাধ।
প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে কী কী ধরনের বৈদেশিক মুদ্রা একাউন্ট রাখতে পারেন?
উত্তর: তারা বাংলাদেশে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রায় অনিবাসী চলতি ও মেয়াদী জমা হিসাব পরিচালনা করতে পারেন (যা অন্যান্য জাতীয়তার অনিবাসীদের জন্যও উন্মুক্ত)। এসব হিসাবের স্থিতি মুনাফা/সুদ সমেত অবাধে বিদেশে প্রত্যাবাসন করা যায়।
প্রবাসী/অনিবাসী বাংলাদেশী ও অন্যান্য জাতীয়তার অনিবাসীরা বাংলাদেশে আর কী কী ধরনের আর্থিক বিনিয়োগ করতে পারেন?
উত্তর: ক. বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীরা টাকায় সরাসরি ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। এ বিনিয়োগের আসলের অংক বৈদেশিক মুদ্রায় অবাধে বিদেশে প্রত্যাবাসনযোগ্য এবং মুনাফার অংক টাকায় বাংলাদেশে ব্যবহার্য। খ. প্রবাসী/অনিবাসী বাংলাদেশী ও অন্যান্য জাতীয়তার অনিবাসীরা বাংলাদেশে: (১) টাকায় সরকারি ট্রেজারী বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। মেয়াদ পূর্তিতে অথবা যে কোন সময় সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রয় করে আসল ও মুনাফা অবাধে বিদেশে প্রত্যাবাসনযোগ্য। (২) অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক শাখায় নন-রেসিডেন্ট ইনভেস্টরস টাকা হিসাব (NITA) এর মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত শেয়ার/সিকিউরিটিজ এ বিনিয়োগ করতে পারেন; এসব বিনিয়োগের আসল ও মুনাফা অবাধে বিদেশে প্রত্যাবাসন করা যায়। গ. অনিবাসী বাংলাদেশীগণ বাংলাদেশ সরকারের মার্কিন ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও মার্কিন ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। এগুলোর আসল এবং ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের মুনাফা অবাধে বিদেশে প্রত্যাবাসনযোগ্য, প্রিমিয়াম বন্ডের মুনাফা টাকায় বাংলাদেশে ব্যবহার্য। ঘ. অনিবাসী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান কর্তৃক NITA হিসাবের মাধ্যমে Alternative Investment Fund এর পাশাপাশি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অনুমোদিত Open End Mutual Fund এ বৈদেশিক পোর্টফোলিও বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
স্থানীয় উৎসের তহবিল অনিবাসী বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবে জমা করা যায় কি?
উত্তর: বিদেশ থেকে আনীত অর্থের ওপর অর্জিত বৈধ মুনাফা ছাড়া অন্যবিধ স্থানীয় উৎসের কোন তহবিল বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবে জমা করা যায় না।
বাংলাদেশে নিবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রা একাউন্ট পরিচালনা করতে পারেন কি?
উত্তর: ক. বিদেশ সফর শেষে প্রত্যাগত নিবাসীরা সঙ্গে আনা অব্যবহৃত বৈদেশিক মুদ্রা অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট হিসাবে জমা করতে পারেন; হিসাবের স্থিতি টাকায় নগদায়ন ছাড়াও পরবর্তীতে বিদেশ যাত্রার সময় হিসাবধারী সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট হিসাবের বিপরীতে ইস্যুকৃত আন্তর্জাতিক কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে ব্যবহার করতে পারেন। খ. রপ্তানিকারকদের প্রত্যাবাসিত রপ্তানি আয়ের নির্ধারিত অংশ অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে রপ্তানিকারকের রিটেনশন কোটা একাউন্টে জমা রাখা যায়। এ হিসাবের স্থিতি রপ্তানিকারকের ব্যবসায়িক বিদেশ ভ্রমণ বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যবহার করা যায়।
বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রাপকের নামে ব্যাংক একাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক কি?
উত্তর: না। তবে প্রাপকের অনুকূলে সংশ্লিষ্ট ড্রাফট/টিটি/এমটির অর্থ বাংলাদেশে তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে সংগ্রহ বাধ্যতামূলক
অনুমোদিত ডিলার নয় এমন ব্যাংক শাখায় প্রাপকের টাকা একাউন্টে বিদেশ থেকে অর্থ প্রেরণ করা যায় কি?
উত্তর: হ্যাঁ। প্রাপকের হিসাবধারী ব্যাংক শাখা প্রাপ্ত অন্তমূর্খী রেমিট্যান্স কোন অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক শাখা থেকে টাকায় নগদায়ন করে নিতে হবে।
বাংলাদেশে নিবাসীরা ব্যক্তিগত ভ্রমণ খাতে কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা কিনতে পারেন?
উত্তর: ব্যক্তিগত ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশে নিবাসী কর্তৃক প্রতি পঞ্জিকাবর্ষে মাথাপিছু অনধিক ১২,০০০ মার্কিন ডলার ক্রয়যোগ্য।
নগদ নোট আকারে বৈদেশিক মুদ্রায় ক্রয়যোগ্য/উত্তোলনযোগ্য অংকের পরিমাণ/সীমা আছে কি?
উত্তরঃ মার্কিন ডলার নগদ নোট আকারে এককালীণ উত্তোলন/ছাড়ের পরিমাণ সীমা ৫,০০০ মার্কিন ডলার। সমুদয় ছাড়/উত্তোলনযোগ্য অংক অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রায় নগদ নোট আকারে নেয়া যায়, আন্তর্জাতিক কার্ড/ট্রাভেলার্স চেক/ড্রাফট আকারেও সমুদয় ছাড়/উত্তোলনযোগ্য অংক মার্কিন ডলারসহ যে কোন বৈদেশিক মুদ্রায় নেয়া যায়।
বিদেশে চাকুরি/অভিবাসন ইত্যাদি সূত্রে একমূখী টিকেটে বিদেশ যাত্রায় বাংলাদেশে নিবাসী ব্যক্তির প্রাপ্য বৈদেশিক মুদ্রা কত হবে?
উত্তরঃ দ্বিমুখী টিকেটের ন্যায় একমুখী টিকেটেও এ ধরনের বিদেশ যাত্রায় অব্যবহৃত ভ্রমণ কোটার সম্পূর্ণ পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা কেনা যাবে (যেমন-২,০০০ মার্কিন ডলার আগে ব্যবহার করা হয়ে থাকলে পঞ্জিকা বর্ষের অবশিষ্ট অব্যবহৃত ১০,০০০ মার্কিন ডলার একমুখী টিকেটে বিদেশ যাত্রার জন্য কেনা যাবে)।
ব্যবসায়িক/দাপ্তরিক প্রয়োজনে বিদেশ ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশে নিবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় করতে পারেন কি?
উত্তরঃ দাপ্তরিক প্রয়োজনে বিদেশ ভ্রমণের জন্য সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত খাতের কর্মকর্তারা সরকার নির্ধারিত হারে এবং পেশাগত/ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বিদেশ ভ্রমণের জন্য বেসরকারী খাতের নিবাসী ব্যক্তিরা মাথাপিছু দৈনিক অনধিক ৪০০ মার্কিন ডলার হারে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় করতে পারেন।
ভ্রমণকোটা বাবদ প্রাপ্যের পুরো অংক লাইসেন্সধারী মানিচেঞ্জার থেকে বা অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক থেকে কেনা যায় কি?
উত্তরঃ লাইসেন্সধারী মানিচেঞ্জার ভ্রমণকোটা বাবদ প্রাপ্য পরিমাণ হতে যাত্রী প্রতি অনধিক ১,০০০ মার্কিন ডলার বিক্রি করতে পারে। অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক শাখা ভ্রমণকোটা বাবদ ছাড়যোগ্য সম্পূর্ণ অংক বিক্রি করতে পারে।
বাংলাদেশে নিবাসীদের বিদেশে অধ্যয়নের ব্যয়বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা কেনা যায় কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ। বিদেশে ভাষা শিক্ষা কোর্সসহ স্বীকৃত সুপরিচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পেশাগত ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট কোর্স এবং স্নাতক/ স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নের ফি/বেতন ও বিদেশে থাকা খাওয়ার খরচ বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা (বিদেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যয় প্রাক্কলন মোতাবেক) অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক থেকে কেনা যায়। দূরশিক্ষণ/স্কুল পর্যায়ে অধ্যয়ন বা অন্যান্য ব্যতিক্রমী ব্যবস্থায় পড়াশোনা বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা ছাড় বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি সাপেক্ষ। এছাড়া বিদেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাসমূহের আবেদন, রেজিস্টেশন, ভর্তি, পরীক্ষা ফি বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করা যায়।
বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় বাবদ বাংলাদেশে নিবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রা কিনতে পারেন কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ। বিদেশী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের দেয়া ব্যয় প্রক্কলন মোতাবেক অনধিক ১০,০০০ মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক থেকে কেনা যায়, এর বেশি মাত্রার বৈদেশিক মুদ্রা ছাড় বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি সাপেক্ষ।
কোন কোন ধরনের বৈদেশিক মুদ্রা প্রাপ্যতার বিপরীতে আন্তর্জাতিক কার্ড (ক্রেডিট/ডেবিট/প্রি-পেইড) ব্যবহার করা যায়?
উত্তরঃ রপ্তানিকারকদের রিটেনশন কোটা হিসাবের স্থিতি, বার্ষিক ব্যক্তিগত ভ্রমণ কোটা, নিবাসী বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবের স্থিতি, অনুমোদিত বেসরকারী হজ এজেন্সীসমূহকে বরাদ্দকৃত বৈদেশিক মুদ্রা, হজ পরিপালনের উদ্দেশ্যে হজযাত্রীদের জন্য বরাদ্দ বৈদেশিক মুদ্রা, সরকারি ও বেসরকারি খাতে দাপ্তরিক বা পেশাগত প্রয়োজনে ভ্রমণের জন্য ছাড়যোগ্য অংক, ব্যবসায়িক ভ্রমণ কোটা, ব্যক্তিগত বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবের স্থিতির বিপরীতে, BASIS সদস্য আইটি/সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক রেমিট্যান্স সুবিধা, বিদেশী প্রফেশনাল এবং সায়েন্টিফিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য ফির পাশাপাশি বিদেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন, রেজিস্ট্রেশন, ভর্তি, পরীক্ষা ফি (TOEFL, SAT etc.), স্বতন্ত্র ডেভেলপার/ফ্রীল্যান্সারদের আইটি সংশ্লিষ্ট ব্যয় নির্বাহের জন্য বাৎসরিক বরাদ্দকৃত বৈদেশিক মুদ্রা, স্বতন্ত্র ডেভেলপার/ফ্রীল্যান্সারদের রপ্তানিকারকদের প্রদত্ত সেবার বিপরীতে প্রাপ্ত অন্তর্মুখী রেমিট্যান্স জমাকরণের জন্য, প্রদত্ত সেবার ভিসা প্রসেসিং ফি, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড বাংলাদেশে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক থেকে সংগ্রহ ও ব্যবহার করা যায়।
বিদেশগামীরা বাংলাদেশ ত্যাগকালে এবং বিদেশ থেকে আগতরা বাংলাদেশে আসার সময় বাংলাদেশ টাকায় কী পরিমাণ অংক সঙ্গে রাখতে পারে?
উত্তর: অনধিক দশ হাজার টাকা।
বাংলাদেশে আগত অনিবাসী নাগরিকের সঙ্গে আনা বৈদেশিক মুদ্রা টাকায় ভাঙ্গানোর পর বৈদেশিক মুদ্রায় পুনঃরূপান্তর করা যায় কি?
উত্তর: যে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক এর কাছে বৈদেশিক মুদ্রা টাকায় ভাঙ্গানো হয়েছিল, সেই অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক থেকে অব্যয়িত টাকার অংক বৈদেশিক মুদ্রায় পুনঃরূপান্তর করে সংশ্লিষ্ট অনিবাসী বাংলাদেশ ত্যাগকালে সঙ্গে নিতে পারেন। এছাড়াও বাংলাদেশে আগত অনিবাসীগণ তাদের রূপান্তরকৃত টাকা যে কোন লাইসেন্সপ্রাপ্ত মানিচেঞ্জার এর নিকট থেকে নগদায়ন সনদ উপস্থাপন সাপেক্ষে বৈদেশিক মুদ্রায় পুনঃরূপান্তর করতে পারেন। তবে মানিচেঞ্জারের ক্ষেত্রে পুনঃরূপান্তরিত বৈদেশিক মুদ্রার অংক ৫০০ মার্কিন ডলারের বেশি হবে না। উল্লেখ্য, বিমানবন্দরের বহির্গমন লাউঞ্জে অবস্থিত ব্যাংক বুথ হতে বাংলাদেশী টাকা হতে অনধিক ১০০ (একশত) মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রায় পুনঃরূপান্তর করা যায়।
বিদেশে অভিবাসন আবেদনের ফি ইত্যাদি বাবদ বাংলাদেশে নিবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রা কিনতে পারেন কি?
উত্তর: বিদেশী অভিবাসন কর্তৃপক্ষ যাচিত সনদপত্র মূল্যায়ন ফি, ইমিগ্রেশন ভিসা ফি ও রাইট অব ল্যান্ডিং ফি বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক থেকে ক্রয় ও প্রেরণ করা যায়।
বাংলাদেশে নিবাসীরা স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়লব্ধ টাকা বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশে পাঠাতে পারেন কি?
উত্তর: না, বাংলাদেশী টাকা মূলধনী খাতে রূপান্তরযোগ্য ঘোষিত না হওয়ার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়লব্ধ অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তরপূর্বক বিদেশে প্রেরণের সুযোগ নেই।
বিদেশে প্রত্যক্ষ বা পোর্টফোলিও বিনিয়োগ বাংলাদেশে নিবাসীদের জন্য উন্মুক্ত কি?
উত্তর: না। ২৪নং ক্রমিকের উত্তরে উল্লিখিত কারণে।
বাংলাদেশে নিবাসীরা বিদেশ থেকে অবাধে ঋণ/আগাম নিতে পারেন কি?
উত্তর: না। তবে বাংলাদেশে নিবাসীরা ব্যক্তি খাতে শিল্প উদ্যোগ অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এর পূর্ব অনুমোদনক্রমে বিদেশ থেকে মধ্য বা দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ নিতে পারেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের Standing Committee on Non-Concessional Loan এর অনুমোদনক্রমে এবং বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংক এর অনুমোদনক্রমে বিদেশ হতে ঋণ নিতে পারে।
বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশী ও অন্যান্য জাতীয়তার অনিবাসীরা বাংলাদেশের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে পারেন কি?
উত্তর: বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশী ও অন্যান্য জাতীয়তার অনিবাসীরা অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিতে পারেন। এছাড়াও বিদেশে কর্মরত অনিবাসী বাংলাদেশীগণ গৃহঋণ সুবিধা বাবদ টাকায় ঋণ নিতে পারেন।
বিদেশ থেকে কীভাবে অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট পাবো?
বিদেশি ব্যাংকে যদি আপনার অ্যাকাউন্ট থাকে, তাহলে নিচের উপায়ে আপনি স্টেটমেন্ট পেতে পারেন:
- ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহার করে নিজে স্টেটমেন্ট ডাউনলোড করা
- ব্যাংকে অনুরোধ করে ইমেইলে স্টেটমেন্ট পাঠানো
- কুরিয়ারের মাধ্যমে নোটারাইজড কপি চাওয়া
- বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিত্বকারী ব্যাংকের মাধ্যমে স্টেটমেন্ট চাওয়া (যদি থাকে)
স্টেটমেন্ট প্রয়োজন হলে ব্যাংকের কাস্টমার সার্ভিসে যোগাযোগ করা সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।
________________________________________
এলসি (LC) কী?
LC বা Letter of Credit হলো একটি ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত নিশ্চয়তা যেখানে বলা হয় যে, নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলে বিক্রেতা (রপ্তানিকারক) নির্দিষ্ট অর্থ পাবে। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্য ঝুঁকি কমায়।
________________________________________
কীভাবে এলসি করতে পারবো?
এলসি খোলার জন্য আপনাকে করতে হবে:
- ব্যাংকের ট্রেড ফাইন্যান্স বিভাগে যোগাযোগ
- প্রোফর্মা ইনভয়েস, চুক্তিপত্র, টিআইএন, বিআইএন, ইমপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ইত্যাদি জমা
- প্রয়োজন অনুযায়ী মার্জিন বা জামানত দিতে হতে পারে
- ব্যাংক যাচাই-বাছাই করে এলসি ইস্যু করে।
এলসির সাথে কোন কোন পক্ষ জড়িত থাকে?
এলসিতে সাধারণত নিচের পক্ষগুলো জড়িত থাকে:
- আমদানিকারক (Applicant)
- রপ্তানিকারক (Beneficiary)
- ইস্যুইং ব্যাংক (Importer-এর ব্যাংক)
- অ্যাডভাইজিং ব্যাংক (Exporter-এর ব্যাংক)
- কনফার্মিং ব্যাংক (প্রয়োজন হলে)
- নেগোশিয়েটিং ব্যাংক (যদি আলাদা হয়)
________________________________________
এলসির সাথে জড়িত বিভিন্ন ব্যাংকের ভূমিকা কী?
- Issuing Bank: এলসি ইস্যু করে এবং অর্থ পরিশোধের নিশ্চয়তা দেয়
- Advising Bank: রপ্তানিকারককে এলসি নিশ্চিত করে পৌঁছে দেয়
- Confirming Bank: অতিরিক্ত নিশ্চয়তা দেয় (যদি থাকে)
- Negotiating Bank: কাগজপত্র যাচাই করে রপ্তানিকারককে অর্থ প্রদান করে
________________________________________
কত প্রকারের এলসি হয়ে থাকে?
প্রচলিত এলসির প্রকারভেদ:
- Irrevocable LC
- Revocable LC
- Sight LC
- Usance (Deferred Payment) LC
- Transferable LC
- Back-to-Back LC
- Standby LC
- Red Clause LC
- Green Clause LC
________________________________________
বিল অফ লেডিং (B/L) কী?
বিল অফ লেডিং হলো পরিবহনকারী কর্তৃক ইস্যুকৃত ডকুমেন্ট যা প্রমাণ করে যে মাল পাঠানো হয়েছে। এটি তিনটি ভূমিকা পালন করে:
- পণ্যের মালিকানা নির্দেশ করে
- পরিবহনের চুক্তিপত্র
- পণ্য গ্রহণের প্রমাণ
________________________________________
বিল অফ এক্সচেঞ্জ কী?
এক্সচেঞ্জ বিল হলো এক ধরনের লিখিত চাহিদাপত্র যেখানে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে নির্দিষ্ট সময় ও পরিমাণে অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দেয়। এটি আন্তর্জাতিক লেনদেনে পেমেন্ট ইনস্ট্রুমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
________________________________________
নিটা (NITA) কী?
Non-Resident Investor’s Taka Account (NITA) হলো এমন একটি টাকায় পরিচালিত হিসাব, যা বাংলাদেশের বাইরের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য খুলতে পারেন। এর মাধ্যমে শেয়ার কেনা-বেচা, লভ্যাংশ গ্রহণ ও মূলধন প্রেরণ সম্ভব।
________________________________________
নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট কী?
নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট হলো একটি ব্যাংকের বিদেশি ব্যাংকে রাখা অ্যাকাউন্ট, সাধারণত বিদেশি মুদ্রায়। এটি আন্তর্জাতিক লেনদেন ও পেমেন্ট সেটেলমেন্টের জন্য ব্যবহৃত হয়।
________________________________________
ভস্ট্রো অ্যাকাউন্ট কী?
ভস্ট্রো অ্যাকাউন্ট হলো বিদেশি ব্যাংক কর্তৃক কোনো দেশের ব্যাংকে খোলা অ্যাকাউন্ট, যা মূলত স্থানীয় মুদ্রায় থাকে। এটি উল্টোভাবে নস্ট্রোর বিপরীত।
________________________________________
প্রোফর্মা ইনভয়েস কী?
প্রোফর্মা ইনভয়েস হলো রপ্তানিকারক কর্তৃক প্রাথমিক মূল্য, পরিমাণ ও শর্ত উল্লেখ করে পাঠানো একটি ডকুমেন্ট, যা আমদানিকারক এলসি খোলার জন্য ব্যবহার করে।
________________________________________
SWIFT কী?
SWIFT (Society for Worldwide Interbank Financial Telecommunication) হলো একটি নিরাপদ মেসেজিং নেটওয়ার্ক, যা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য ব্যবহার করে।
________________________________________
UCPDC কী?
Uniform Customs and Practice for Documentary Credits (UCPDC) হলো আন্তর্জাতিক চেম্বার অফ কমার্স (ICC) কর্তৃক প্রকাশিত নিয়মাবলি যা Documentary Credit-এর আওতায় কাগজপত্র যাচাই ও পরিশোধ নিয়ন্ত্রণ করে।
________________________________________
ISBP কী?
International Standard Banking Practice (ISBP) হলো Documentary Credit-এর আওতায় কাগজপত্র যাচাই করার জন্য স্ট্যান্ডার্ড নির্দেশিকা।
________________________________________
URC কী?
Uniform Rules for Collections (URC) হলো Documentary Collections (যেখানে পণ্য পাঠানোর পরে কাগজের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হয়) প্রক্রিয়াকে পরিচালনার জন্য ICC প্রদত্ত নিয়মাবলি।
________________________________________
ইনকোটার্মস (Incoterms) কী?
ইনকোটার্মস হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবহৃত স্ট্যান্ডার্ড শর্তাবলি যা ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে দায়িত্ব, খরচ এবং ঝুঁকি কিভাবে ভাগ হবে তা নির্ধারণ করে।
________________________________________
ইনকোটার্মস-এর ধরন কী?
কিছু প্রচলিত ইনকোটার্মস:
- EXW (Ex Works)
- FCA (Free Carrier)
- FOB (Free On Board)
- CFR (Cost and Freight)
- CIF (Cost, Insurance & Freight)
- DAP (Delivered at Place)
- DDP (Delivered Duty Paid)
________________________________________
এইচএস কোড (HS Code) কী?
HS Code (Harmonized System Code) হলো পণ্য শ্রেণিবিন্যাসের জন্য বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত কোড, যা কাস্টমস ও ট্রেড পরিসংখ্যানের জন্য ব্যবহৃত হয়।
________________________________________
ইআরকিউ অ্যাকাউন্ট (ERQ Account) কী?
Exporters' Retention Quota (ERQ) Account হলো এমন একটি বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব, যেখানে রপ্তানিকারকরা রপ্তানি আয়ের নির্দিষ্ট অংশ রাখতে পারেন। এই অর্থ তারা কাঁচামাল আমদানি, বিদেশি সেবা গ্রহণ ইত্যাদিতে ব্যবহার করতে পারেন।
________________________________________
কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url